চেতনার আশেপাশে এত যে কিছু ঘটে চলে, সে সবের মধ্যে ছিপ ফেলে বসে আছে, একা 'আমি' এক। যা পায় তাই তুলে দেখে তার 'আমি' ঝুড়িতে রাখার মত কিনা। কিছু রাখে, বাকি অনেকটাই করে অপচয়। মাঝে মাঝে নিজেকেই প্রশ্ন করে, এত অপচয়? সত্যিই কি কাজে লাগানো যায় না ওগুলো? ওগুলো মানে কোনগুলো? হিসাব করতে পারে না।
ঝুড়ি ভরে। কিন্তু ভরে ওঠে না। একদিন কেউ সেই 'আমি' কে ঘেঁটি ধরে মঞ্চের বাইরে নিয়ে যায়। 'আমি' হাত-পা দাপিয়ে বলে, আরে আমার ঝুড়ি....
বলতে বলতে 'আমি'-র মনে পড়ে যায় সে কত কি হেলায় হারিয়েছে, এবার তাকেও হারাচ্ছে মহাকাল।
ঝুড়ি পড়ে থাকে। কেউ জিজ্ঞাসা করে না এটা কার ঝুড়ি। কাক এসে বসে। সাপ এসে ঢোকে। ক্রমে সব নুড়ি-পাথর আর মাটি হয়ে যায়।
চেতনার চারপাশে যা ঘটছে, আরেক 'আমি' কাউকে ডাকে না। তার কোনো ঝুড়ি নেই। সে সব কিছু দেখে। কোনো কিছুর মধ্যে যোগাযোগ বা সঙ্গতি খোঁজার চেষ্টা তার নেই। সে জানে সব কিছুর সঙ্গে সব কিছুর অনাদিকাল থেকে সংযোগ। আপেল মাটিতে পড়ে, সে রহস্য আপেলের মধ্যে লুকিয়ে নেই, আছে পৃথিবীর কেন্দ্রে। সূর্যের আলোকে বন্দী করার কৌশল জানে অতক্ষুদ্র একটা ঘাস। এই সব চেয়ে চেয়ে দেখে, ভাবে, গুনগুন করে সেই ঝুড়িহীন আমি।
মহাকাল আসে। বলে চলো, সে বলো হুম, চলো। ঝুড়ির 'আমি' বলে, "না যাব না। কোনোদিন যাব না।"
ঝুড়িহীন আমি বলে, তুই নেই, আমি আছি বলেই তুই আছিস।
ঝুড়ির আমি বলে, মিথ্যা কথা, এই দেখো আমার ঝুড়ি, এত বাস্তব, এত সত্য। তোমার কি আছে, দেখাও।
ঝুড়িহীন আমি হাসে। সে দু'বার চোখের পাতা ফেলতেই দেখে অনেক অনেক ঝুড়ি-আমি এদিক ওদিক বসে।
ঝুড়িহীন আমি বলে, এ সবও তুমিই। এক এক বয়সে এক এক ভাবে ঝুড়ি ভরেছ। আসল তুমি কোনটা বলো দেখি?
সব ঝুড়ি-আমি এ ওর দিকে তাকায়। কেউ জানে না আসল ঝুড়িটা কার!
ঝুড়িহীন আমি মিলিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বাকিরাও ছায়ার মত যায় মিলিয়ে।