Skip to main content

অনেক রাত। বাঁধা পাঁঠাটার ঝিমুনি এসে গিয়েছিল। হঠাৎ পাশ থেকে কে যেন ঠেলা মেরে বলল, অ্যাই...

    পাঁঠাটা ঘোলা ঘোলা চোখে তাকিয়ে বলল, আমায় বলছেন?

    কুকুরটা পাশে বসে বলল, কাল তবে জবাই?

    পাঁঠাটা আবার চোখ বুজে বলল, মনে তো হচ্ছে। 

    ক্ষোভ হয় না?

    পাঁঠা চোখটা মুদে বলল, কেন?

    কুকুরটা বলল, না মানে এই সারাটা জীবন বাঁধা থেকে কাল বলি....

    পাঁঠা বলল, তুমিও ভাই স্বাধীন থেকে কি করলে? বসে বসে সেই কবে থেকে তোমাদের জীবনও তো দেখছি ভাই। এর ওর লাথিঝ্যাঁটা খেয়ে, দু'মুঠো খাবারের জন্য যে লড়াইটা করে বেঁচে আছ.... তার চাইতে এই ঢের ভালো... মালিক নিজের গরজেই আমায় বেশ খাইয়ে দাইয়ে নধর বানালো, এইবার যা হবার হবে। সে তোমাকেও কোনোদিন এই বাসের তলায়, নইলে কারোর লাঠির বাড়িতে, নইলে কোথাও পোকায় খাওয়া শরীরে ধুঁকতে ধুঁকতে মরতে হবে....

    কুকুরটা উদাস হল। বলল, মানে তোমার বিন্দুমাত্র ক্ষোভ নেই?

    পাঁঠা বলল, না.... স্বাধীনতা এক বিলাসিতা ভায়া... গরীবের কাছে, মূর্খের কাছে, মানে আমাদের মত সাধারণের কাছে সে এক বালাই... রাতদিন কি করি... কি করি করে মাথা খারাপ করা... এর চাইতে কেউ বেঁধে ধরে রাখলে অনেক ভালো জীবন কাটে... অন্তত স্বাধীন হওয়ার অলীক স্বপ্নের বিলাসিতাটা তো থাকে। সে ভালো। বাস্তবের স্বাধীনতার ঝক্কি অনেক ভায়া, বুঝেছ! 

    কুকুরটা লেজ গুটিয়ে রাস্তায় মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। বলল, আমাকেও তবে জবাই করে দে কাল তোর মালিককে বলে... দেবে না?

    পাঁঠা চোখটা মেলে বলল, তোর মাংস কে খাবে রে হতচ্ছাড়া... আমাদের এদিকে চলে না.. তার চাইতে তুই এই স্বাধীনতার নরক যন্ত্রণা ভোগ কর, আমি বরং জীবনের বাকি সময়টুকু উপভোগ করে নিই... যা আর জ্বালাস না.. 

    কুকুরটা উঠে এসে হাইড্রেনের পাশে বসল। ড্রেনের থেকে হাজার হাজার পোকার বিষণ্ণ স্বাধীনতার দীর্ঘশ্বাস শুনতে শুনতে ভাবল... তবে আমি এখন কি করি? ভাবা শেষ হল না। একটা মাতাল এসে ক্যাঁৎ করে লাথি মেরে বলল, যা শালা, আমি নবাব... আমার মসনদে শোয়া?