চায়ের দোকানে লুঙ্গিটা গুটিয়ে বসে আছে খাটুয়া। পায়ে বহুদিনের পরা ঢিলে আকাশী নীল মোজা। হাওয়াই চটির মধ্যে ভরা পা। গায়ে এক সময়ের ভালো স্বাস্থ্যের ঢোলা সোয়েটার। মাথায় হনুমান টুপি।
ভীমা চায়ের জল চাপিয়ে বলল, খাটুয়া চপ নিয়ে এসো তো। মা আজ চপ খেতে চেয়েছেন।
ভীমার মা দোকানের কোণে বসে রুটি বানাচ্ছে। খাটুয়ার টাকা হাতে নিয়ে অমন অপ্রতিভ মুখটা দেখে মুখটা টিপে হাসল।
খাটুয়া বলল, ক'টা আনব?
ভীমা বলল, চারটে। আমার দুটো। মায়ের দুটো। প্লাস্টিকের মুখটা টাইট করে বেঁধে এনো। নইলে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
খাটুয়া বড় রাস্তাটা দিয়ে হাঁটতে শুরু করল। রাস্তা দিয়ে বড় বড় লরি যাচ্ছে। এটা এক্সপ্রেস ওয়ে। খাটুয়া রিকশা চালায়। এই রাস্তা দিয়ে রিকশা চালানো বারণ।
চপের দোকানে ভিড় নেই তেমন। যা ঠাণ্ডা পড়েছে। চারটে চপ ঠোঙায় ভরতে ভরতে লক্ষ্মণ বলল, খাস না কিন্তু খাটুয়া.... আবার হাস্পাতালে ভর্তি হবি।
খাটুয়া রাস্তা দিয়ে ফিরছে। বড় রাস্তা দিয়ে। বড় বড় লরি যাচ্ছে। খাটুয়া এই রাস্তা দিয়ে রিকশা চালায় না। কোনোদিন চালায়নি। হাতে গরম প্লাস্টিক। চপের গন্ধ আসছে। তার পেটে নাকি ঘা আর ঘা। খেলেই আবার রক্ত বেরোবে হাগা দিয়ে। মরবে।
দোকানে এসে চপের প্লাস্টিকটা ভীমাকে দিল। পয়সা ফেরত দিল। বলল, আমি বাড়ি যাই।
ভীমার মা উঠে এলো বাইরে, দুটো রুটি হাতে দিয়ে বলল, খাটুয়া মিষ্টি কিনে নিয়ে যাস, আজ তরকারিটা খেলে পেট-বুক জ্বলে মরবি। তোর জন্যে তুলে রাখতে ভুলে গেছি রে আগে থেকে।
ভীমা খাটুয়ার কেউ হয় না। ভীমার মা-ও না। তবু মাঝে মাঝেই আঝালা তরকারি তুলে রাখে ভীমার মা। যেদিন না পারে ভীমার মা রুটির সঙ্গে দশটা টাকা দেয়। দুটো মিষ্টির জন্য। আজও দিয়েছে। রুটির সঙ্গে সঙ্গে টাকাটাও হাতে লাগছে।
গলি দিয়ে হাঁটছে খাটুয়া। এই রাস্তা দিয়ে সে রিকশা চালায়। স্টেশানে যায়, বাজারে যায়, মন্দিরে যায়। আরো কত কত জায়গায় যায়। বড় রাস্তা দিয়ে হুস হুস করে লরি চলে যাচ্ছে। ভীমার মা তরকারি তুলতে ভুলে যায় মাসে সাত-আটবার কিন্তু টাকাটা দিতে ভোলে না।
খাটুয়া গলার কাছটা ধরে এলো। একদিন ওই বড় রাস্তা দিয়ে ভীমার মা আর ভীমাকে নিয়ে যাবে খাটুয়া রিকশা চালিয়ে। ঝিলের ধারে। যে ঝিলের ধারে অনেক বক আসে সকালে।