Skip to main content

হঠাৎ-ই তো ঝড় উঠল। জানলাটা খড়খড় করে কেঁপে উঠল। পায়ের কাছে রাখা চাদরটা কোনো রকমে টেনে নিতে প্রায় শ্বাস আটকে আসছিল। কিন্তু উপরের জানলাটা?

কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে নিল। চশমাটা বালিশের পাশ থেকে নিয়ে ডায়াল করল… বাবু….

======

আজ এমন ঠাণ্ডা হয়ে গেল চারদিক, আজ বিক্রি বেশি হবে। যা যা প্যাকেটগুলো বানা… অন্তত দেড়শো…..

মোটা কালো শরীরটা নিয়ে চলতে ফিরতে কষ্ট হয়। লোকে বলে সারাদিন নাকি সে গেলে। বিরিয়ানির গন্ধে নাকি শরীরটা জলহস্তীর মত হয়েছে, এই বয়সেই… চোদ্দো বছর।

দোকানের পাশের ঘরটা অন্ধকার। কারেন্ট নেই। ঝড়ে তার ছিঁড়েছে হয় তো। কিন্তু সব দোকানে জেনারেটার আছে। ভিজে রাস্তার উপর দোকানে লাল, সবুজ আলো পড়েছে। চশমার দোকানটার সামনে একটা মা কুকুর, বাচ্চাকে নিয়ে জড়সড়ো ঘুমিয়ে। সারাদিন যা গরম ছিল। জিভ বার করে হেদিয়ে মরেছে।

মায়ের কথা মনে হল। আটটা। মা এখন নার্সিংহোম চলে গেছে। নাইট শিফট। আয়ার কাজ করে।

খিদে পাচ্ছে। কাজ করতে ইচ্ছা করছে না। বেড়াতে যেতে ইচ্ছা করছে। স্টেশানে গিয়ে ঘুগনি পাঁউরুটি খাবে। কিন্তু ছাড়বে না।

======

বাবু… উপরের জানলাগুলো লাগিয়েছিস?

ফোনটা কানে নিয়ে কলের মুখটা টাইট করছে। এম এ পাশ। পাইপের কাজ করে। ঝড় উঠেছে। মা বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না। জানত ফোন আসবে। ফোনটা কলের পাশেই রেখে কাজ করছিল। আরো চারটে বাড়ি।

মা আমার মনে পড়ছে না…. আমি এই কাজটা সেরে আসছি…. জানলাটা বন্ধ করে যাব…..

ফোনটা এখনও ধরা। মা জিজ্ঞাসা করতে চাইছে…. খেয়েছিস?

না। খাবে। ডিমটোস্ট। সাড়ে তিনটে বাজে। পুরো অন্ধকার হয়ে এসেছে।

তুমি ঘুমাও। আমি আসছি।

ফোন রেখে দিল। অন্যমনস্কতায় হাতটা কেটেছে। রক্ত পড়ছে। চুষে নিল। এমন অবেলায় বৃষ্টি। উপরের ঘরে একদিন জানলা বন্ধ করার কেউ আসবে। তার জন্য অপেক্ষা করবে। মাকে বিকেলে চা দেবে। দোকানের ছেলেটা রোজ আসে না। ভিড় থাকলে মা অপেক্ষা করে করে ঘুমিয়ে পড়ে।

======

আজ একটু হালকা। রিং করল।

দীপদা… বাবুকে দেবেন….

ঠোঙা বানাচ্ছে… পিছনের ঘরে…. জন্মের কুঁড়ে শালা…. আধঘন্টা বাদে কল করুন….. আমি দেখছি… কাস্টমার আছে।

আধঘন্টা কাটছে না। কান্না পাচ্ছে। ও ছেড়ে যাবে জানত। এখন অন্য মেয়ের সঙ্গে থাকে। আসলে সংসারে ছোটো-ছোটো স্ক্রু-গুলো আগে খুলতে থাকে। মানুষ খেয়াল করে না। নেশায় থাকে। বড় ঘাটটা খুলে গেলেই সবার চোখে পড়ে। বড় ঘাট খুলে গেছে।

বাবু….

হ্যাঁ বলো….

খেয়েছিস কিছু..

হ্যাঁ, এই আমি আর রতন গিয়ে স্টেশান থেকে ঘুগনি আর পাঁউরুটি খেয়ে এলাম….. একটা জিনিস দেখো….

মা আর বাচ্চা কুকুরটার ছবি তুলে হোয়াটস অ্যাপে পাঠালো।

কি আরামে ঘুমাচ্ছে না? নার্সিংহোমের গন্ধটা মাঝে মাঝে বড্ড উৎকট লাগে। এখন লাগছে যেমন।

হ্যাঁ…. কাল পাস্তা বানাবে?

বানাব….

ফোন কেটে দিল। সব সময় ফোন রাখা যায় না।

======

পর্দা ঠেলে ভিজে হাওয়া আসছে। কান পেতে আছে। তেষট্টি বছরের কানে ছেলের সাইকেলের বেল আলাদা করে চেন যায়।

আসবে ছেলে। ঝড় এলেও আসবে। আসছে। আরেকটু অপেক্ষা। তেষট্টি বছর কিছুই না। আরো কয়েক শো বছর অপেক্ষা করতে পারে। বিছানায় শুয়ে শুয়েই।