সৌরভ ভট্টাচার্য
2 January 2019
এবারে ঝিলে নাকি প্রচুর পরিযায়ী পাখি এসেছিল। যারা মাছ ধরতে যায় দুবেলা, তারাই গল্প করছিল। একজন বিড়িতে উজ্বল একটা টান দিয়ে বলল, তার বাপ-ঠাকুরদার জামানাতেও এত ভিনদেশি পাখি কেউ দেখেনি।
শীতের কুয়াশা ভিনদেশি নয়। সূর্যের আলোও ভিনদেশি নয়। তারা পরস্পর একটা বোঝাপড়া করে একদিন পুরো ঝিলটা ঢেকে ফেলল। ঝিলের একদিকে কুয়াশা আরেকদিকে রোদ। যারা মাছ ধরতে এলো তাদের কেউ কেউ ভাবল শীত এবার হয়ত যাবে। কেউ ভাবল যাবে না, আরো জাঁকিয়ে পড়বে। ব্যস, অমনি ঝগড়া তর্ক শুরু। এ বলছে, দেখছ না কেমন ঘন কুয়াশা? ও বলছে, আর রোদ্দুরটা বুঝি চোখে পড়ছে না?
ঝিলে তখন সত্যিই প্রচুর বিদেশি পাখিদের ভিড়। দেশি পাখিরাও আছে, কিন্তু না থাকার মত, রোজ থাকে যে, তাই চোখে পড়ে না। তারা সবাই তর্ক শুনতে লাগল। জলের মাছগুলো তর্ক শুনতে লাগল। তর্ক হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। তখন না দেখা যায় কুয়াশা, না রোদ। একটা একটা করে তারা উঠতে লাগল। সব পাখিরা ঘুমিয়ে পড়ল। সব মাছেরা ঘুমিয়ে পড়ল। সব তার্কিকরা বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল।
ঘুমের মধ্যে কেউ পরিযায়ী হয় না। অন্ধকারের ভূগোল থাকে না। তারাদের কোনো স্মৃতি থাকে না। শুধু সারা পৃথিবী জুড়ে শিশির পড়তে লাগল, শব্দ নেই, তবু যেন শব্দ আছে - ঝুপ ঝুপ ঝুপ। যারা ঘুমিয়ে তারা শুনল না। যারা জানলার কাছে জেগে তারা শুধু শুনল। কারণ রাতজাগা কান, রাতজাগা চোখের কাছে কিছুই আড়াল থাকে না।