সৌরভ ভট্টাচার্য
20 July 2020
হাস্পাতালের দোতলায় বসে আছি। ফাঁকা বেঞ্চ। রাত আড়াইটে হবে। আমার পাড়ার একজন বয়স্ক মানুষের জন্য এসেছি। ওনার ছেলে নীচে গেছে ওষুধ কিনতে। একাই বসে মোবাইল ঘাঁটছি, হঠাৎ পাশে এসে মনে হল কেউ দাঁড়াল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম। কেউ নেই। টানা বারান্দা। ফাঁকা। আবার মোবাইল ঘাঁটছি, হঠাৎ আমার পিঠে যেন কেউ হাত রাখল। আমি লাফিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে পিছনে ঘুরেই দেখি একজন ঢ্যাঙা লম্বা লোক। আমার দিকে ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে। যেন এখনই ঘুমিয়ে পড়বে। আমায় বললে, আমায় একটু মর্গের রাস্তাটা দেখিয়ে দেবেন?
আমি বললাম ইয়ার্কি হচ্ছে... ভয় দেখানো.... ফাজলামি?
সে একটা বড় হাই তুলে বলল, চলুন না দাদা প্লিজ, মর্গটা দেখিয়েই চলে আসবেন..
কেন, আপনি কি ওখানে কাজ করেন নাকি?
ধুর মশায়, বেঁচে থেকে কাজ করে করে হাড়গুলো খড়খড়ে হয়ে গেল..আবার মরেও কাজ?...
অ্যাঁ! মানে আপনি....
তা ভূত বলুন, আত্মা বলুন, যা হয় কিছু একটা বলুন, কিন্তু আমায় প্লিজ পৌঁছে দিন...
তা বেরিয়েছিলেন কেন?
আরে মশায় ডায়াবেটিস ছিল তো যখন বেঁচে ছিলাম, তা ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ চাপত..... অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল.... তা সেই অভ্যাসেই বাইরে বেরিয়েছিলাম..অনেকক্ষণ হাইড্রেনের ধারে দাঁড়িয়ে রইলাম.... হল না। তারপর মনে পড়ল, যা, আমি তো এই প্রস্রাব করতি যেয়েই মাথায় নারকেল পড়ে গতকালই মারা গেলাম.. তা আত্মার আবার লিঙ্গ হয় নাকি!
বুঝলাম... তারপর রাস্তাটা হারালেন.....
হুম... চলুন না প্লিজ... আমি পড়তে জানি না... নইলে আপনাকে এত রাতে বিরক্ত করি? ভূত বলে কি ভদ্রতাবোধ নেই...
আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ দেখি আমার বন্ধুটা ওষুধ নিয়ে ফিরছে.....
আমার ধড়ে প্রাণ এল... আমি ওকে কিছু বলতে যাব হঠাৎ দেখি ওর পিছনে পিছনে স্টেথো ঝোলানো একজন বয়স্ক মানুষ আসছেন.... বুঝলাম ডাক্তার... নিশ্চয় আমার বন্ধুর বাবার অবস্থা খারাপ তাই.....
আমার বন্ধু আমাকে বলল, তুই দাঁড়া.... আমি ওষুধটা ওয়ার্ডে দিয়ে আসছি....
চলে গেল। ডাক্তার হঠাৎ আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, আপনি এই পাগলটার পাল্লায় পড়েছেন বুঝি....
ডাক্তারের ডান হাতের তর্জনীর ইঙ্গিত ঢ্যাঙা ভূতের দিকে...
ধুর মশায়... ও ভূতটুত কিছু নয়... মাঝরাতে কাউকে একা পেলেই বলে চলুন আমায় মর্গে ছেড়ে দিয়ে আসুন, আমি ভূত রাস্তা হারিয়েছি.... তাই শুনেই অনেকে অজ্ঞান হয়ে যায়.. অনেকে সাহস করে মর্গ অবধি যেই যায় অমনি এ নানা অঙ্গভঙ্গী করে ভয় দেখায়.... যা ভাগ....
ঢ্যাঙা লোকটা ডাক্তারের ধমক খেয়ে পালালো.... আমার এবার সত্যিই ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার মত অবস্থা... আমি বললাম, আপনি...
উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন, আমি ডাক্তার মাইতি.. আটান্ন সালের চৌঠা ফেব্রুয়ারী ওই নীচের ফ্লোরে সুইসাইড করেছিলাম... আসলে একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম... সেও এই হাস্পাতালের নার্স ছিল... অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়.... এখন আমরা দু’জনেই এই হাস্পাতালে রাত্তিরে ঘুরে বেড়াই... কার কখন কি দরকার লাগে... কই গো এসো.....
আমার সামনে একটা ছায়া এগিয়ে আসছে... কিন্তু আমার চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে....