Skip to main content
 
 
        কিছুটা অস্থিরতা থাকা ভালো। সময়ের, চিন্তার, সম্পর্কের। নইলে খাদ জমে। মিথ্যা জমে। যা কিছু অস্থির করে তোলে তাই বর্জন করতে হবে, এ কথা ঠিক নয়। যা ঘেঁটে দিয়ে যায়, তা আরেকবার সাজিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জও জানিয়ে যায়। সেই আরেকবার সাজানোর মধ্যে আবার নতুন করে নিজেকে চিনে নেওয়াও যায়। নিজেকে, নিজের সময়কে, নিজের চারপাশকে আরেকবার আবিষ্কার করার সুযোগ পাওয়া কি চাট্টিখানি কথা? 
        মহাপুরুষদের কথা থাকুক। আমি যে বেঁচে আছি এ কথাটা মাঝে মাঝে সজোরে কোনো সাজানো কিছু ভেঙে না পড়লে যেন অনুভব করতে পারি না। প্রকৃতিও পারে না। বসন্ত সেজেগুজে কেমন পরিপাটি করে বসতে যাচ্ছিল, এমন সময় বুনো মোষের মত একরাশ কালো মেঘ কেমন দিয়ে গেল সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে? এইটাই বেঁচে থাকা। এমন আচমকা চমকে উঠে অতিথি অনাকাঙ্ক্ষিতকে অভ্যর্থনা জানানোর ক্ষমতাকেই বলি বেঁচে থাকা। নইলে 'ভ্যালা রে নন্দ বেঁচে থাক চিরকাল' এর মত বেঁচে কি সুখ? 
        আমার বন্ধু তার বোনপোকে স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে ফিরছে। হাঁটতে হাঁটতে সে বোনপো পরিচয়ধারী মানবশিশুটি দেখল রাস্তায় জল জমেছে। তাকালো মামার দিকে। শাসন নেই, প্রশ্রয় আছে। দিল ঝাঁপ। জল উঠল চলকিয়ে। সে উঠল নেচে। 
        রাস্তা যে শুধু মসৃণ হলেই আনন্দ তা তো নয়। মাঝে মধ্যে অমন খানাখন্দ না হলে বেঁচে থাকাটা ঠিক প্রকৃতির সাথে মেশে না। ভয় জমে। রাগ জমে। ঈর্ষা জমে। অসন্তোষ জমে। চলাটা খুঁড়িয়ে চলা হতে হতে ক্রমে থেমে যাওয়া হয়। স্থিরতা জন্মায়। বিপদ ঘটে, মানে বি-পদ আরকি। জমা জলে হাত-পা ছুঁড়ে সুখ নেই। স্রোত যদি নেই তবে পাঁক আছে বুঝতে হবে। সে বাইরেটা যতই সাজানো থাকুক। অমন বাঁধানো পাড়, সাজানো ধার বদ্ধজল দীঘির মত মানুষ আমি অনেক দেখেছি। দুই ডুবে পাঁকে পা আটকিয়েছে। দীঘির তাই নদীকে এত ভয়। স্রোত নেই তাই সমুদ্রতে যাওয়ার তাড়াও নেই। নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা ছাড়া আর গতিও নেই। সমুদ্রতে যে হারাবে, এতবড় মনের জোর কই? না আছে তার পাহাড়ি উৎস, না আছে পাড়ি দেওয়া দীর্ঘপথ। তার জল ভিক্ষার সঞ্চিত জল। অস্থির হলেই পাড় ছাপিয়ে সীমা হারিয়ে লজ্জিত হয়। মজা পায় না। পাছে বুজিয়ে দেয়!
        সেই একজন যেমন মাইক্রোবায়োজিলস্টকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কীট বলেছিল, কারণ তার শরীরে বাসা বাঁধা ডেঙ্গুর ভাইরাস পুরুষ না নারী তিনি বলতে পারেননি বলে। তার ধারণা ছিল তার জানার বাইরে যা কিছু, সে শুধুই চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র তার বিরুদ্ধে। সে দীঘির জলের নিরাপদ ছায়ায় জগত দেখতে চেয়েছিল, নদীর স্রোতে ঝাঁপ দেওয়ার সাহস ছিল না বলে।