সৌরভ ভট্টাচার্য
8 January 2018
রোজ সকালে আধঘন্টা ধরে ঝুঁকে পুরো উঠোনটা ঝাঁট দিতে হয় রুকমির মাকে। আজ পঁচিশ বছর ধরে দিয়ে আসছে। তার আগে তার শাশুড়ি দিত - অশোকের মা।
রুকমির মায়ের অসহ্য লাগে। শরীরখারাপের সময়টা আর শীতের সময়টা। ভেবেছিলো অশোকের মা ঘাটে উঠলে এই ঝাঁটা দেওয়ার চলটা উঠিয়ে দেবে। মাসে একবার কি দুবার দেবে। শরীরখারাপের পর আর কম শীতের সময় বাদ দিয়ে।
হল না। যেদিন রাতে শুতে যাওয়ার সময় এটা ভাবল, সেদিন সারারাত ঘুমই এলো না। তিনবার উঠতে হল রাতে, যেন তলপেটে নদী কেটেছে কেউ। মাঠে বসে বসেই দেওয়ালে হেলান দিয়ে রাখা ঝাঁটাটা দেখছিল। কেন জানি হাতটা সুড়সুড় করছিল তখনই ঝাঁট দেওয়ার জন্য, ভাগ্যিস রুকমির বাবার বাইরে পেলো বলে উঠেছিল।
আজ সকালে ঝাঁট দিতে দিতে এই কথাগুলোই ভাবছিল রুকমির মা। কোমরটা ঝুঁকে খানিক রাখার পর দাঁড়ালে টনটন করে চাগাড় দেয় কোমরটা এখন। আগের মত ঝটঝট পারে না। যাই হোক, ঘুরে কুয়োপাড়ের দিকে গেল। জল ছেটাতে হবে। পিছল বলে, নাকি মাথাঘুরে গেল, বুঝল না, সটান চিৎপাত হয়ে পড়ল রুকমির মা।
ডাক্তার বলল কোমর ভেঙেছে। সময় লাগবে। হাড়ের মজবুতি কম। জোড়া লাগলেও জোর কমবে।
ক’দিন পর তাদের বাড়িতে কাকচিল বসা দায়। রুকমির মায়ের সাথে বিলোতির তুমুল ঝগড়া রোজ সকালে। উঠোন ঝাঁট দেওয়া নিয়ে। বিলোতি রুকমির মায়ের দেওয়ের ছেলের বউ। শীত পড়লে আর শরীরখারাপের সময় বিলোতি বেঁকে বসে। শলা পালটায় না। শুকনো পাতা ঠিকমত ঝাঁটায় না। বিড়াল পাড়ালেও ঘরে শুয়ে শুয়ে শুকনো পাতার আওয়াজ শুনতে পায় রুকমির মা। চীৎকার করে ওঠে..আরে ও বিলোতি...
পাড়ার লোক বলে, ওই শুরু হল।