Skip to main content


সুজাতার দিকে বিপুল তাকিয়ে থাকে। বারোমাস তাকিয়ে থাকে। কখনো নাভির দিকে, কখনো বুকের দিকে, কখনো চোখের দিকে, কখনো কপাল ঘেষা চুলের দিকে। বিয়ের আটটা বসন্ত পেরিয়ে গেলেও তাকিয়ে থাকে। আসলে বিপুল জানে সে সুজাতাকে ভীষণ ভালোবাসে। ছুটিতে কোনো বন্ধুর বাড়ি যায় না, অফিসের পার্টিতে যায় না, ট্যুরের পর ট্যুর ক্যান্সেল করে দেয়। তার সুজাতাকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে না। 
সুজাতার প্রথম প্রথম ভালো লাগত। ভীষণ ভালো লাগত। অন্যান্যদের থেকে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করত। গর্ব বোধ করত। তারপর ধীরে ধীরে গা-সওয়া হয়ে যেতে লাগল। যেমন গায়ে লাগানো পারফিউমের গন্ধ কিছুক্ষণ পর নিজে আর পাওয়া যায় না, তেমন বিপুল ছায়ার মত মিলিয়ে যেতে লাগল। ক্রমশঃ সুজাতা বিরক্ত হতে থাকল। বিপুলের দৃষ্টিকে মনে হতে লাগল গারদ। বিপুলের আদরকে মনে হতে লাগল আতিশয্য। বিপুলকে মনে হতে লাগল শর্ত, অধীনতা। ভালোবাসার নীড়ে বসন্ত গিয়ে প্রখর গ্রীষ্ম এলো। বিপুল বুঝল না। বিপুল নিজের চোখ ছাড়া কারোর চোখে কিছু দেখতে পায় না। 
বিপুলের বন্ধুর স্ত্রী মারা গেল ব্রেস্ট ক্যানসারে। বিপুল ভয় পেল। বিপুল আতঙ্কিত হল। বিপুল সতর্ক হল। অনুরাগের সাথে কথা বলল। অনুরাগ গাইনো। বিপুলের বাল্যবন্ধু। শহরতলীর ডাক্তার। মাঝে মাঝেই চেক-আপে যাবে সুজাতা। সুজাতার বংশে ক্যান্সারের জীবাণু।
এখন সুজাতা ঘনঘন চেক-আপে যায়। তুচ্ছ কারণেও যায়। অকারণেও যায়। অনুরাগের বাড়ির সামনে খোলা মাঠ। অনুরাগের স্পর্শে বিরাগ মাখানো ভালোবাসা। অনুরাগের ঠোঁটে তাৎক্ষণিক, পুনরাবৃত্তিহীন ভালোবাসা। অনুরাগের বাড়ির ছাদের উপর নিঃশর্ত আকাশের মেঘ, ছায়া আছে, দাবী নেই।
সুজাতার শরীর চেতনার সাথে দ্বিখণ্ডিতা। একখণ্ড আটপৌরে, আরেক খণ্ডে স্রোতের মতন উতল হাওয়া। সুজাতা কালবৈশাখীর স্বপ্ন দেখে মাঝরাতে। ঘুম থেকে উঠে ছাদে আসে। অখণ্ডিত আকাশ, দ্বিখণ্ডিত মন কোনো এক সূত্রে জুড়ে যায়। সেখানে বিপুল নেই, অনুরাগ নেই, সেও নেই। তার মনের নীচে আরেক মন উড়ে আকাশে ডানা মেলে, সুজাতাকে ডাকে, বলে উড়ে আয়... আয়... আয়...
সুজাতা ভাবে যাবে কোনো একদিন সব ছেড়ে। সব পরিচয়ের বাইরে। তলিয়ে যেতে, হারিয়ে যেতে মহাশূন্যে। সব প্রেম থেকে বহুদূরে। শান্ত হবে সেদিন সে, কালবৈশাখীকে বলবে, চুপ... যাঃ