বাচ্চাটার মুখে একটাই কথা, আমি বড় চিপসটা খাব। মা মুখের দিকে তাকিয়ে বড় চিপসটা হাতে দিয়ে, চারদিকে তাকাল। চিপসের প্যাকেটটা মাটিতে পড়েছিল, মা কুড়িয়ে পেয়েছে। মুখটা খোলা, তবু, বাচ্চাটা চাইছে, কি আর হবে?!
বাচ্চাটা চিপস চিবোতে চিবোতে কালী ঠাকুরের জিভটা দেখতে দেখতে বলল, মা জিভ বার কর। মা জিভ বার করে দেখালো। বাচ্চাটা খুশী না। মা, আরো বড় করে জিভ বার কর। মা চেষ্টা করল। বাচ্চাটা দাপালো। তারপর বলল, ওই জিভটা চাই, অমন লাল টুকটুকে জিভটা নিয়ে সে নিজের মুখে লাগাবে। মা চট করে কোলে তুলে মণ্ডপের বাইরে এলো। পাপ হবে নইলে।
নর্দমার ধারে চপের দোকান। বেশি বিক্রি হয় না। জিজ্ঞাসা করল, কাঁদছে কেন? মা বলল, ওই বায়না। আজ বিক্রি যা হওয়ার হয়ে গেছে। ছেলেকে কোলে তুলে বাইরে বেরিয়ে গেল বাবা। মা দোকান গুছাতে বসল।
বাজি কিনে বাবা ছেলে বাইরে এলো। বাবা ফেরার পথে দিশি মদের দোকান হয়ে ফেরার পথ ধরল। বাচ্চার হাতে বাজির প্যাকেট। একটা লরি বেসামাল ছিল। রাস্তার থেকে কিছুটা উঠে ফুটপাথে বাবা আর ছেলেকে চেপে দেওয়ালে ধাক্কা মারল।
কালী পূজোয় বেরোয় না সন্ধ্যা। চপের দোকানটা পূজোর একদিনও বন্ধ করে না। কালীর জিভের দিকে তাকালে বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। শেষ দিন একটা তুবড়ি, আর একটা চরকি জ্বালিয়ে বাইরের দরজা বন্ধ করে। ঘরে রাখা থাকে একটা চিপসের প্যাকেট। থালায় সাজিয়ে চুপ করে বসে থাকে। বাইরে মাইকে একই গান, একই আলো, একই লোকেরা, একই মূর্তি, একই মণ্ডপ। সব থেমে আছে। ফুটপাথে রক্তের দাগ মুছে গেছে শুধু। লরির ড্রাইভারটাও ছাড়া পেয়ে গেছে, শুনেছে। পাক, সেই ভালো, বাচ্চা তো শুধু একারই নেই।
সৌরভ ভট্টাচার্য
9 November 2018