জেটিকে যদি জিজ্ঞেস করি, "জেটি তুমি কার?" জেটি কি উত্তর দেবে, জানি না।
জেটির অবস্থানটা ঠিক বিমানবন্দর বা রেলস্টেশানের মত নয়। সে স্থলভাগ থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে - স্থবির। একটা সাঁকো তাকে স্থলভাগের সাথে যুক্ত রেখে দেয়, স্থলের প্রয়োজনে, মানে মানুষের প্রয়োজনে। জলে ঢেউ ওঠে, জেটি দুলে ওঠে, তার সাথে দোলে সাঁকো। জেটিকে নদীর খেয়ালের সাথে সাঁকোর দুলুনির সামঞ্জস্য রেখে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়।
জেটির বুকে শক্তপোক্ত থাম, তার শরীরে বাঁধা জলযানটিকে নিজের সাথে আটকে রাখার দায়ে। শক্ত দড়ি দিয়ে জলযান বাঁধা - খোলা হবে, কোনটাই তার ইচ্ছায় নয়, নদীর মেজাজ বুঝে, মানুষের প্রয়োজনের তাড়া বুঝে।
জেটির স্থলও নেই, জলও নেই। তার এই মধ্যবর্তী অবস্থানের কি সংজ্ঞা হয়? জানি না। শান্ত জেটিতে দাঁড়িয়ে শরতের নীল ক্যানভাসে সাদা মেঘের ছোপ যেমন দেখেছি, উত্তাল জেটিতে দাঁড়িয়ে ভয়-আশঙ্কায় কালো মেঘের প্রবল পরাক্রমও দেখেছি। কিন্তু আলাদা করে বসে জেটির কথা শোনা হয়নি।
কেউ শোনে না। কারোরই সময় হয় না। সময় ভীষন আত্মগত। লক্ষ মানুষের পায়ের তলায় যে জেটি সে জেটিকে ভোলা যায়, কারণ অপেক্ষা চিরটাকাল দূরের তাগিদে নিকটকে উপেক্ষা করে।
তবু জেটি যেন তার এই মধ্যবর্তী অস্তিত্বের মধ্যেই কোন একটা দর্শনের খোঁজ পায়। জনশূন্য, জলযানহীন নিঃসঙ্গ জেটি মধ্যরাতে আকাশের দিকে বুক পেতে শুয়ে যখন চিৎ সাঁতার দেয় তখন মনে হয়, সে নিজেকে নিজের মধ্যেই স্বাধীনভাবে আবিস্কার করে। তার মুখের যদি বলিরেখা হত তবে সে বলিরেখা হয় তো সংসারের কিছু কিছু মানুষের মুখের বলিরেখার সাথে মিলে যেত, যারা স্থলে নিঃসঙ্গ, জলে দিশাহীন, আকাশে বৈরাগ্যহীন - তবু সংসারের সাথে ক্ষীণ সাঁকোর সম্পর্কটা বাঁচিয়ে নিজের আস্তিত্বটা টিকিয়ে রাখতে চায়, আকাশকে সাক্ষী রেখে।
সৌরভ ভট্টাচার্য
6 December 2018