এই খানিক আগের ঘটনা। বাইকে করে ফিরছি বন্ধুর সঙ্গে, হঠাৎ ট্রাফিক পুলিশ আটকালো।
আটকানোর কারণ নেই। হেলমেট পরে ছিলাম। দু'জনেই। যা হোক, দাঁড়ালাম সাইডে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স, পলিউশানের পেপার, ব্লুবুক সব দেখলেন। বললেন ঠিক আছে যান। আসলে পুজোর সময় তো। একটু বেশি চেক দরকার এই সময়।
আমরা বেরোতে যাব, হঠাৎ আবার ডাকলেন, বললেন, মডেলটা নতুন?
বন্ধুর বাইক। বলল, হ্যাঁ।
উনি বললেন, ভালো, বেশ হার্ডি। মাইলেজ কেমন দেয়? ভালো?
এদিকে মশা কামড়াচ্ছে, রাস্তার এদিকে ময়লার পাহাড়। দুর্গন্ধও আসছে। ভয় লাগছে। যা ডেঙ্গু হচ্ছে চারদিকে। বন্ধু বলল, ভালো মাইলেজ দেয়।
যা হোক, ছাড়া পেলাম, রাস্তার উল্টোদিকে চায়ের দোকান, ঢুকলাম। খুব ভালো চা বানায় ছেলেটা। এই লকডাউনেই নতুন খুলেছে দোকানটা। আমাদের চেনে।
আমরা বাইকটা স্ট্যাণ্ড করছি, ও এগিয়ে এলো। বলল, তোমরা কার সঙ্গে কথা বলছিলে একটু আগে ওদিকে?
আমি বললাম, আরে পুলিশে ধরেছিল... পুজোর আগে এ সব তো আছেই.....
ছেলেটা মোবাইলটা বার করল। ছবি দেখালো। আমরা দু'জন বাইকে বসা। সামনে আমার বন্ধু হাতটা বাড়িয়ে, হাতে কিছু একটা ধরা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু সামনে কেউ নেই।
আমি বললাম, ইয়ার্কি মারছিস?
সে আরেকটা ছবি বার করল।
আমি বললাম, হ্যাঁ ইনিই তো... তোর পরিচিত?
সে বলল, হ্যাঁ। আরে রাকেশদার বাবা। এইখানেই বছর দশেক আগে বাইক অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান। তারপর থেকে মাঝে মাঝেই....
আমরা দোকানে এসে বসলাম। বিশ্বাস হচ্ছে না। সামনে রাস্তা দিয়ে হুস হুস করে বাইক, গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে। এও কি সম্ভব? রাকেশ এখন দুবাইতে।
হঠাৎ সামনে একটা কাগজের টুকরো ভেসে এলো। তাতে লেখা, সব হয়। আজ তোদের আমার তরফ থেকে ট্রিট। ভূত মানেই ভয় নয় রে। ভূত মানে হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা। তাকালেই দেখবি।
চা নিয়ে এলো ছেলেটা। আমরা কাগজটা দেখালাম। সে হাতের লেখাটা দেখে বলল, আমার বাবার। বলে দেওয়ালে টাঙানো ছবিটা দেখালো। বলল, বাবা লোককে খাওয়াতে ভালোবাসতেন। তাই…
ছেলেটা চুপ করে থাকল। তারপর বলল, বাবা বলছেন, যে যাকে হারিয়েছে সে যে ভালো কাজটা করতে ভালোবাসত সেটাকে আবার করে করা আর তার খারাপ কাজগুলো না করাই আসল মনে করা তাকে… যেমন ছেলেটা আমার গাঁজা খায় না… কিন্তু লোককে আজ খাওয়ায়, প্রাণ ভরিয়ে... ভয় না, ভালোবাসা… মৃত্যুকে হারিয়ে দিয়েও ভালোবাসার দিন আজকে… ভালোবাসতে চর্মচক্ষে দেখার দরকার নেই… মন থাকলেই হল… মন মরে না… শরীর মরে… মন জড়িয়ে ভালোবাসাটাই আসল…
আমরা চুপ। ছেলেটাও চুপ।
একজন লোক এসে বলল, সামনের ওই ট্রাফিক পুলিশ অফিসার এক কাপ চা চাইছেন….
আমার বন্ধুটা উঠল। বলল, দে আমি যাই, দিয়ে আসি। রাকেশকে আমি চিনতাম। কাকুকে চিনতে পারিনি। যাচ্ছি। আর চায়ের দামটা আমার নামে কাটিস। আমার মা-ও লোককে খাওয়াতে ভালোবাসতেন।