Skip to main content

কথাটা শিবজ্ঞানে জীবসেবা না আত্মজ্ঞানে জীবসেবা? কোনটা বেশি কাছে আসে?

    ধরুন একজন মানুষ এসে বলল, আমার কিছু খাওয়া হয়নি। আপনার সঙ্গে সঙ্গে কি মনে হবে? নিজের না খাওয়ার, সে যে কারণেই হোক, সেরকম কোনো স্মৃতি। বা কেউ দেখছেন শীতে কষ্ট পাচ্ছে। আপনার যদি মনে পড়ে শীতের কামড় কাকে বলে আপনি টের পেয়েছিলেন কোনো একদিন যখন আপনার কাছে পর্যাপ্ত শীতের জামাকাপড় ছিল না, আপনি ওর কষ্টটা বুঝবেন। কেউ যদি বলে তার সঙ্গে কেউ খারাপ ব্যবহার করেছে, বা অত্যাচার করেছে, তখন যদি আপনার মনে পড়ে আপনার সঙ্গে ঘটা একই ধরণের কোনো স্মৃতি, হয় তো বা সেই মাত্রায় নয়, বা তার থেকেও বেশি, আপনি তখন বুঝবেন তার উপর দিয়ে কি গিয়েছে।

    অর্থাৎ আপনি কারোর জায়গায় নিজেকে বসালে অনুভব করেন যে তার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে! কি সহ্য করতে হচ্ছে তাকে! কতটা কষ্ট হচ্ছে তার! তখন আপনার তার জন্য কিছু করাটা আর সেবা না, তাগিদ। যা আপনি আপনার আপনজনের জন্য করেন। নইলে সেবা তো আপনি নকুলদানা দিয়েও করেন শিবের। কিন্তু এ তা নয়। এ তাগিদ। রীতিমতো যন্ত্রণার তাগিদ।

    আজ চারদিকে যা চলছে একবার নিজের নাক-মুখটা কয়েক সেকেণ্ডের জন্য চাপা দিয়ে দেখুন। দেখুন অক্সিজেন না, বাতাস, সেই বাতাসের অভাবে প্রাণটা কি করে ওঠে। নিজের নানা রোগের সময় দুর্বলতার কথাটা ভাবুন, মাথাটা অবধি তোলা যায় না। আর এখন সেই অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে একটা হাস্পাতালে একটা বেডের জন্য, একটু অক্সিজেনের জন্য। একটু অনুভব করুন। আর যারা বাড়িতে পুরো পরিবার অসুস্থ তাদের কথা ভাবুন তো। ভাবুন দশদিনের টানা বেড়িয়ে আসার পর যখন রাতের বেলা বাড়ি ঢুকলেন, মনে হয় না কেউ দুটো ভাতেভাত দিয়ে গেলেও অমৃত তখন? আর এই রোগের ক্লান্তি তো ভাষায় বর্ণনারও অতীত। তখন মনে হবে যে করে যদি কেউ দুটো খাবার দিয়ে যায় তো বাঁচা যায়।

    এ সবই আপনি অনুভব করবেন তখন যখন আপনি নিজেকে তার জায়গায় বসিয়ে ভাববেন, কোনো শিব বা দূর্গা, বা কালী, যীশু, আল্লাহ্ কাউকে না। নিজেকে বসান। তাগিদ জন্মাবে। গীতায় একটা কথা আছে,

 

আত্মৌপম্যেন সর্বত্র সমং পশ্যতি যোহর্জুন।
সুখং বা যদি বা দুঃখং স যোগী পরমো মতঃ।। (৬/৩২)

অনুবাদ - যিনি অন্যের দুঃখকে নিজের দুঃখ, অন্যের সুখকে নিজের সুখ বলে অনুভব করেন তিনিই আমার মতে শ্রেষ্ঠ যোগী।