আমি তো জানতাম তিনি বেড়াতে গেছেন। ফিরে আসবেন কয়েক দিন কি মাসের মধ্যেই। ও বাবা! এ তো দেখতে দেখতে বছর ঘুরল। তাঁর তো দেখাই নেই। কেউ বলে, উনি নাকি জলে ডুবেছেন, কোন সমুদ্দুরে তা তিনি-ই জানবেন। কেউ বলে নাকি জঙ্গলে পথ হারিয়েছেন, কেউ বলে জঙ্গলে না তো, মরুভূমিতে! কেউ বলে হিমালয়ের ওদিকে নাকি কি কলোনি আছে, ওখানে ঘর ভাড়া নিয়েছেন। তা শুনে নিন্দুকের দল বলে, "কই? এই তো আমরা সেদিক পানে তাকাতে তাকাতে উড়োজাহাজে চড়ে এনু, সেরকম কিছু দেখনুম নাতো!" আবার কেউ বলে, তিনি নাকি আত্মহত্যা করেছেন। বালাইষাট! তাও কখনও হয় নাকি!
তবু মাঝে মাঝে সিংহাসনটা বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এক একবার ইচ্ছা হয় দিই ফেলে এ সিংহাসন গঙ্গায় গিয়ে। ভয় হয়, যদি হঠাৎ কোদ্দিয়ে এয়ে পড়েন! থাক। কিন্তু অপেক্ষাই বা কত করা যায়! তিনি ভুললেও কি পোড়ামুখো যমরাজ ভুলবে?!! হে হে, সে গুড়ে বালি। পিছনে টাইমার সেট করে ছেড়ে দিয়েছে যে!
কিন্তু তেনার সাথে যে একটা বোঝাপড়া ছিল। তা আর বোধহয় হলনি। অনেকে দরখাস্ত দিয়েছে অবিশ্যি ফাঁকা সিংহাসনে বসার জন্য। শুনেছি অনেকে বসিয়েও ফেলেছেন। সে হোক, তবু মনে একটা 'কিন্তু কিন্তু' লাগে না।
ফাঁকা স্থানটাই এখন যেন আমার সাথে কথা বলে। সুখ-দুঃখের কথা শোনে আমার। এক একবার ভাবি, এই ভালো, ফাঁকারও তো আকার থাকে। ভরতি যা, তার অহংকারের সীমানার শেষে ফাঁকার সীমানা শুরু হয়। যা শূন্য হয়েও পূর্ণ করে। ভয়ে না, প্রেমে। ভয়ের সীমানায় আতঙ্ক, প্রেমের সে বালাই তো নেই। তাই ভাবি, এই বেশ। এই অসীম শূন্যই না হয় রইল আমার হয়ে, সিংহাসন জুড়ে, ক্ষতি কি? আমার দেখার পূর্ণতা দিয়েই ওকে ঘিরে নেব। মিথ্যাকে মিথ্যা বলে বোধ হওয়াকেই তো সত্যবোধ বলি নাকি? সেকি অমনি হবে মন? বাঁধন খোল..বাঁধন খোল....
সৌরভ ভট্টাচার্য
9 August 2017