এখন থেকে আর বাড়তি না, এবার কমতি। খালি খালি বয়েস বাড়িয়ে বাড়িয়ে শেষে বুড়ো হয়ে মরি আর কি! আমি যেন সুকুমার রায়ের পাঠাশালায় পড়িনি! সেই কবে আমাদের উনি শিখিয়ে গেছেন বয়েস বাড়তে দিলেই হল? তাই আমিও এই কমতির দিকে নামলুম। এখন থেকে আমার বয়েস নামবে ৪৪, ৪৩, ৪২... হুম। যতক্ষণ না এই এদের বয়সে পৌঁছাচ্ছি। মানে যাদের সঙ্গে আমার ছবিগুলো।
আগে আমার বন্ধুরা ছিল। তারা বুড়ো হল। তারপর আমার ছাত্রছাত্রীরা এলো। তারা বড় হল। মানে বেজায় বড় হল। এখন আমি ওদের কাউকে পাত্তা দিই না। এখন আমার সঙ্গে ভাব খালি এই এদের। মানে তাদের ছানাপোনাদের। বাকিরা কাছাকাছি এলেই, নো এণ্ট্রি। তারা এলেই আমি এমন ঝেড়ে তত্ত্বকথা শোনাই তারা পালাবার পথ পায় না, আর এরা এলেই আমাদের নানা গপ্পো শুরু হয়। হৈ-হুল্লোড়। লজেন্স, চকোলেট ভাগাভাগি। আরো কত কি! সে সব কথা লেখা যায় না, আর ওসব লিখতেও নেই। যারা বোঝে তারা বিনা বাক্যে এক্কেবারে বোঝে, আর যারা বোঝে না, তারা বইটই পড়ে নালেঝোলে হয়ে এক্কেরে বোঝে না। তাই তাদের সঙ্গে আমার আজকাল মোটে ওঠবোস নেই।
তবু এতটা রাস্তা কি করে হেঁটে ফেললুম জানি না। চিত্তে জুড়ে মহা হট্টোগোল। বাল্যবন্ধু থেকে আমার অর্ধেক বয়েসী প্রাক্তন ছাত্রও আমায় থেকে থেকে নাবালক ঠাওরায়। এত বই পড়ে যে পণ্ডিত হয়েচি, সে মোটেও গায়েই মাখে না। আমিও অবশ্য গায়ে মাখি না। হুস করে দেখি ভরা নদীতে গলা জলে দাঁড়িয়ে। না আছে নাও, না আছে নাবিক। আছে কিছু বন্ধু। যারা আছে বলে আমি আছি। যেদিন থাকব না, সেদিনও তারা থাকবে যদ্দিন থাকব। বাকি তো এ জগতে যেমন ছয় ঋতুর আনাগোনা সে তো থাকবেই.. তখন আমায় নাই বা মনে রাখলে..... আর একজন প্রিয় মানুষ বড় সুন্দর একটা কবিতা লিখে পাঠিয়েছেন.. কে? না হয় সে নাম উহ্যই থাক..
জন্মদিন
********
দিন আসে, দিন যায়
স্মৃতিপত্রে দীর্ঘ হয় ছায়া,
জীবনের পূর্ণ দ্বিপ্রহরে,
চন্দনের শীতল সোহাগরেণুর মতো শান্ত সব মুহূর্তের ছোঁয়া।
কপালের কোণে ফোঁটা, নিয়তিকাজল---
দিন আসে, দিন যায়,
প্রৌঢ় হাতের নিচে দুটি হাত,
একখানি শিরা ওঠা, আরেকটি তত শুষ্ক নয়‐--
দূরাগত সেতারের অন্তর্লীন মূর্ছনার মতো-
অনেক পুরোনো গল্প,
আর না বলা কথাদের গাঢ় মায়া মেখে,
জন্মদিন আসে।
গাছেদের মত হোয়ো,
শিকড়ে প্রণাম রেখো,
শত ডালে ছড়িয়ে দিয়ো সবুজ এক সময়ের আলো,
তোমার একান্ত নিজস্ব সালোকসংশ্লেষ।
ভাল থেকো,
ভাল রেখো।