Skip to main content

জানলার সিট চাইলেই বড়রা দেয় না। মায়ের কোলে বসে বসে জানলার দিকে তাকিয়ে আছে নীল। তার দাঁড়ানোর মত পা নেই। রাণাঘাট লোকালে একদম সিটের ধারে মা বসে আছে তাকে নিয়ে। প্রচণ্ড ভিড় ট্রেনে। সে মামাবাড়ি যাচ্ছে পায়রাডাঙা। ইছাপুর থেকে উঠেছে। জানলার পাশে বসে বসে দেখার ইচ্ছা। কিন্তু কে বসবে তাকে কোলে নিয়ে? যদিও সে রোগা। খুব রোগা। সিক্সে পড়ে।

একজন একজন করে উঠছে বসছে। মায়ের দিকে তাকালো কয়েকবার। মায়ের কোলে বসে মাথাটা উঁচু করে। মা কাউকে বলবে না জায়গা দিতে? মায়ের লজ্জা লাগে। মা যখন তাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে নিয়ে মাঠে গিয়ে দাঁড়ায়। মায়ের কষ্ট হয়। বাকি বাচ্চারা খেলে। সে খেলতে পারে না।

বাদাম কিনে দিল মা। কিন্তু জানলা? সে তো শুধু জানলার পাশটা চাইছে। নৈহাটি চলে গেল। আর মাত্র কয়েকটা স্টেশান। আর হবে না।

হঠাৎ মা বলল, দাদা জানলার ধারটা একটু ছাড়বেন। বাচ্চাটাকে নিয়ে বসব। ও দাঁড়াতে পারে না।

সবাই তাকালো তার পায়ের দিকে। তার এত ভালো জামাপ্যাণ্ট, জুতো, কেউ তাকায়নি এতক্ষণ। এবার তার পায়ের দিকে তাকালো। একজন উঠে গিয়ে বলল, আসুন আসুন.....

মা উঠল। সেও মাকে ধরে মায়ের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। মা তাকে ঘষটে ঘষটে জানলার ধারে আনল। তাকে জানলার পাশে বসিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে বলল, দাদা আপনি বসুন, ওর কতটা জায়গাই বা লাগবে।

তার লজ্জা লাগছে। তার পাশে একজন অচেনা লোক এসে বসল। কেউ বলল, আহা রে, বেচারা, গোটা জীবনটা পড়ে আছে।

সে জানলার দিকে তাকিয়ে। মা মোবাইল ঘাঁটছে। আসলে মায়ের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই তাকে আর তার মাকে দেখছে। কেন যে বায়না করতে গেল। নিজের উপর রাগ হচ্ছে। কাঁচরাপাড়া ছেড়ে যাচ্ছে। মা পাশে বসেছে।

নীল হাতটা মায়ের হাতে দিল। মা ধরল। তার হাত ঘামছে। এরকম হয়। মা আঁচলটা দিয়ে মুছিয়ে দিল। জিজ্ঞাসা করল, জল খাবি?

নীল জলের বোতলটা মায়ের হাতে দিয়ে বলল, আর খাব না। সরি।

নীল চুপ করে জানলার বাইরে তাকিয়ে। গোটা ট্রেনটাই যেন হুইলচেয়ার। সবাই বসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।

মা আর সে কোনো কথা বলছে না। এখন বলবে না কিছুক্ষণ। তারপর অন্য কথা বলে কথা শুরু করবে। যেন কিছু হয়নি। তারপর একদিন এ সব কষ্ট অনেক জমে গেলে মা কান্নাকাটি করবে। তাকে অকারণে বকবে। আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।

পায়রাডাঙা আসছে। মা তাকে কোলে নিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। সবাই তাকাচ্ছে। মা আর সে তাকাচ্ছে না। তাকালেই বা ওরা। সে আর তার মা তো নেমে যাবে। সব ভুলে যাবে। ওরাও ভুলে যাবে।