সুরে বাজল প্রশ্ন, কোন ধারায় বও?
- জানি না
- জানো না কেন?
- কি করে জানব বাউল? মাটিতে শিকড় গেড়ে দু'হাত শূন্যে তুলে গোত্তা খেয়ে পড়ে আছি। বাইবার সময়ই বা কই আর সুযোগই বা কই?
- হুম। তা শিকড়টা গাড়ল কোন মাটিতে?
- বুঝলাম না।
- বুঝাচ্ছি। মাটিটা এঁটেল না বেলে?
- মনে তো হয় এঁটেল
- সবাই তাই বলে রে ভাই। এঁটেল মাটি সংসারে বড় দুর্লভ। দোঁয়াশ আর বেলেতেই ভর্তি।
- তবে এত আঁট কিসের?
- শিকড়ের। তুমি যত জোরে আটকাতে চাও সে তত জোরেই তোমায় আটকাবে। যেদিন শিকড়ের জোর কমবে, দেখবে মাটিটা চিনতে পারছ। সব আলগা হয়ে আসছে। মনটা খারাপ হয়ে গেল?
- তা নয়। তবে এ টানটা পুরো মিথ্যা?
- হ্যাঁ ও বটে, নাও বটে
- হেঁয়ালি ছাড়ো
- হেঁয়ালি না গো। সত্যি মিথ্যা কোনোটাই চিরটাকাল সত্যি মিথ্যা সেজে থাকে না রে ভাই। পালাবদল হয়। সকালের সূর্য্য যেমন নীড় ছাড়ার ডাক দিয়ে যায়, তেমনই সাঁঝের সূর্য্য ডাক দেয় নীড়ে ফেরার। তা বলে কি তুমি সূর্য্যের নামে মামলা ঠুকবে? বলবে বেটা মিথ্যুক!
- হুম। তবে আমার বেলা কখন হবে?
- যখনই দেখবে গাছের ডালে শুধু কচি পাতাই না, পাণ্ডুবর্ণের পাতাও লেগে আছে। তারা ঝরবার অপেক্ষায়।
যখনই দেখবে নদীর জলে জোয়ার ভাঁটা দুটোই তোমার চোখে পড়ছে। মন শুধু শরীরের ভাঁজে প্রেমকে খুঁজে বেড়াচ্ছে না, তাকে স্থির চোখের মধ্যে ডুবে হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারছে। জানবে তোমার শিকড় আলগা হয়েছে।
- তখন কোন ধারায় বইব?
- সে প্রশ্ন অকারণ তখন। বেয়ে যাওয়ার দিক থাকে দিকহারার, দিকশূন্যের না। যার শূন্যতে বাস, তার গতি শান্তিতে, গভীর জলে, ঢেউ না তুলে। পাড়ের লোক বোঝে না। সাগরের তীরে তীরে ফেরে ঘরের লোক। মাঝসমুদ্রে আসে বাইরের লোক।
- এখন তবে কি করি? মন যে উদাস করে দিলে বাউল!
বাউল কই। দিগন্তের পানে শ্যামল চোখ মেলে উদাস পৃথিবী আমার সামনে। নীলাকাশ নীরবে কিছু সাদা মেঘের ভেলাকে পার করাচ্ছে পূব থেকে পশ্চিমে। ঘাসের গায়ে গা এলিয়ে শুয়ে পড়লুম। মাটির স্পর্শ, মাটির গন্ধ, মনকে উদাস করল আরো। ছেড়ে যেতেই হবে সব? কোথায়?
একটা ঝরা পাতা উড়ে এসে আমার বুকের ওপর পড়ল।
[শিরোনামটি গুরু নানকদেবের একটি গান থেকে সংগৃহীত]
(ছবিঃ সুমন)