গন্তব্যে যেতে হবে। নদী উত্তাল। তায় রাতের অন্ধকার। নৌকায় ছয়জন যাত্রী।
ইনস্টিংক্ট বলল, আমার স্থির বিশ্বাস দক্ষিণ দিকে আর চোদ্দোবার দাঁড়া টানলেই পৌঁছিয়ে যাব। আমার গাট ফিলিংস।
ইন্টেলিজেন্স বলল, চুপ কর আহাম্মক, তোর এই গাট ফিলিংস এর ঠেলায় কতবার ডুবতে ডুবতে বেঁচেছি আমরা। আমার হিসাব বলছে দক্ষিণ দিকে আরো মাইল তিনেক গিয়ে একটা বাঁক আসবে, যা পড়েছিলাম, তারপর হয় তো পশ্চিমের শাখাটা ধরে এগোতে হবে।
ইনস্টিংক্ট বলল, এই তোমার এক সমস্যা, তুমি কোনো বিষয়েই আমার মত নিশ্চিত নও। আমি ভুল হই, ঠিক হই, কিছু একটা নিজের ফিলিংস অনুযায়ী বলে তো দিই। তারপর যা হয় হোক।
ইন্টেলিজেন্স বলল, বোকা রে, আমি না থাকলে তোর সব জারিজুরি অ্যাদ্দিনে ফক্কা হয়ে যেত। এই যে বেটা মোটাটা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে, তুই না থাকলে ওকে আমাদের নৌকায় বয়ে নিয়ে বেড়াতে হত? কি নাম যেন ওর?
ইনস্টিংক্ট বলল, তোমরা বেশি বুদ্ধিমানেরা ওর নাম দিয়েছ, কুসংস্কার। কিন্তু আমার কাছে ও ধ্রুবতারা। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক হয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু আমি জানি ও আছে বলেই সব ঠিক আছে। তোমাদের মত সংশয়ে ভোগে না ও অন্তত, ওর একটা নির্দিষ্ট বক্তব্য আছে। জগতের সব কিছুর একটা ব্যাখ্যা আছে ওর কাছে ওর মত করে। ও যা বলে আমি ফস করে বুঝে যাই, তোমরা যে কেন বোঝো না আমার মাথাতেই ঢোকে না।
ইন্টেলিজেন্স বলল, মূর্খের আত্মবিশ্বাস। জগতের সব কিছুর ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই ঠিকই, কিন্তু তোমার কাছে আছে বলেই আমার এত ভয়।
এই শুনে ইনটুইশান বলল, এ তোমার বেশি বাড়াবাড়ি ইন্টেলিজেন্স ভাই, মূর্খের আত্মবিশ্বাসের কি আছে? আমি যেমন যা বুঝি টক করে বুঝি। ওই হাড় হাবাতে ইন্টেলেক্টের মত কড় গুনে গুনে আঁক কষে কষে বুঝি না। আমার সামনে জটিল কিছু ধাঁধা রাখো, আমি তাকিয়েই সবটা বুঝে ফেলি। দেখামাত্র। হ্যাঁ, আমার যে ভুলচুক হয় না, তা নয়, তবে আমার অত সময় লাগে না বুঝতে।
ইন্টেলেক্ট বলল, তা ভাই আমি সব বুঝি না ঠিক, কিন্তু যা বুঝি না তা স্পষ্ট করে বলে দিই, আবার যা ভুল হল, তা কেন ভুল হল সেটাও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করি। তোমার মত শুধু গুটিকয়েক ঠিক বোঝার উদাহরণকে ঝুলিতে ভরে, ভুল বোঝার উদাহরণগুলোকে ভাসিয়ে দিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাই না।
এই নিয়ে নৌকায় তুমুল হট্টগোল বেধে গেল। একদিকে ইনস্টিংক্ট আর ইনটুইশান, অন্যদিকে ইনটেলিজেন্স আর ইন্টেলেক্ট। একদিকে ভয়ংকর আবেগী আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে সীমাবদ্ধতার সীমারেখা থাকলেও অভিজ্ঞতা নির্ভর বিশ্বাস। কি গণ্ডগোল, কি গণ্ডগোল রে বাবা!
এই সব দেখে নৌকার পালের উপর শুয়ে থাকা ক্ষীণতনু প্রজ্ঞা বা উইজডাম বলল, শান্ত হও... শান্ত হও... ধৈর্য ধরো, ধৈর্য ধরো, তবেই যাওয়া যাবে। শুধু সজাগ থাকো….. জাগতে রহো... জাগতে রহো….