আমি এই মহাপ্রাণের সম্বন্ধে জ্ঞাত হই অনন্যার কাছ থেকে। সেদিন শ্রদ্ধায় মাথা নীচু হয়ে এসেছিল। ভারাক্রান্তও হয়েছিলাম এই ভেবে যে এমন মানুষদের কথা আমরা এত কম জানি কেন? আমাদের মিডিয়া এত উদাসীন কেন? সত্যার্থী যদি নোবেল না পেতেন ওনাকেও তো সারা ভারতের সিংহভাগ মানুষ চিনতেনই না। এ ক্ষতিতে তাঁদের মত মহামানবদের ক্ষতি নেই, ক্ষতি আমাদের মত ক্ষুদ্রচিত্তদের যাদের চিত্ত কিছুটা আলোকিত হয়ে ওঠে এই মানুষদের আলোকিত অস্তিত্বে। বিশ্বাস জন্মায় যে পৃথিবীটা সম্পূর্ণ 'আমি' আর 'আমার' নয়, তার বাইরেও একটা বড় পৃথিবীর আহ্বান আছে, সেখানেও বড় করে শ্বাস নেওয়া যায়, আর সেই গভীর শ্বাসে জীবনের এমন কিছু অনালোকিত রন্ধ্র উন্মোচিত হয় যে নিজেকে সার্থক লাগে, নিজেকে নিয়ে চলাটা সহজ হয়ে যায়। অহংকারের সব চাইতে বড় অভিশাপ এই নয় যে সে বাইরে থেকে আমার ঘরে কাউকে আসতে দেয় না, সে আমাকেও বাইরের এই বিশাল জগতে পা রাখতে দেয় না, যেখানে তার নিজের অস্তিত্ব সংকট, এই তার চূড়ান্ত অভিশাপ।
যে মানুষটাকে নিয়ে কথা আজ তিনি তা পেরেছেন, সংগোপনেই পেরেছেন। আজ যখন তাঁর কাজের স্বীকৃতির জন্য, পুরষ্কারের জন্য কেউ এগিয়েছে, তিনি খুব স্বাভাবিকভাবেই বলেছেন, 'আমি এর যোগ্য নই, আর এর জন্য যোগ্য তারা যারা এই কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।' একেবারেই নিজের স্বভাবোচিত কথাই বলেছেন। যে মানুষ নিজের গভীরের সেই মহামানবের দাসত্ব করছেন, সে মানুষের বাইরের যে কোনো সম্মান, সম্পদই বালাই বা অতিরিক্ত বই কার কিছু নয়। কারণ যে আত্মপ্রসাদ উনি নিজের আত্মবলিদানে নিজের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে পেয়েছেন তার কাছে লৌকিক যে কোনো সম্মান অকিঞ্চিৎকর। এমন নীরব আত্মবলিদানই আজ অবধি ঈশ্বরের অস্তিত্বের একমাত্র বিশ্বস্ত প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাকি তো সব জল্পনা।
আজকের দিনে সেবাও একটা ধর্মীয় ব্যবসা। মানুষ দুর্গত হলে, বন্যায় ভাসলে, ভূমিকম্পে গৃহহীন হলে বহু প্রতিষ্ঠান জননিবেদিত অর্থেই তাদের সেবা করে নিজেদের মহত্বের কৃতিত্ব অর্জন করতে চান। সেই সুবাদে নিজেদের রাজকীয় ত্যাগের বিজ্ঞাপনটাকে পুনরায় সবার সামনে এনে নিজেদের ভোগের ব্যবস্থাটাকেও কায়েমী করে ফেলেন। এদের সেবা দেখলেও আতঙ্ক লাগে, মনে হয় না জানি কি বাসনা।
কিন্তু এই মানুষটা কোনো দুর্যোগের অপেক্ষা করেননি, যখন সমস্ত মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করা খুব সহজ কাজ, ইনি প্রতিদিনের জীবনে মানুষের উপেক্ষায়, বঞ্চনায়, অবহেলায় থাকা মানুষগুলোকে খুঁজে বার করেছেন, সে দৃষ্টি আর সে হৃদয় তিনি তাঁর কাছ থেকেই পেয়েছেন যাকে আমরা অন্তর্যামী বলে থাকি। কিন্তু সাধারণের অন্তর্যামীর কন্ঠস্বর অহংকারে উচ্চকণ্ঠস্বরের কাছে ক্ষীণ হয়ে আসে, লোভ আর ভয়ের কাছে ভেসে যায়। কিন্তু এই অসীম সাহসী মানুষগুলোর কাছ থেকে তা ফেরে না। সেখানে সে সার্থক হয়। সে মহাত্মা হয়ে ওঠা, মহাত্মা বা মহামানব মানে এই নয় যে, যে শুধু বিশাল, মহামানব বা মহাত্মা মানে সেই যার মধ্যে অনেক ক্ষুদ্র মানব তথা আত্মা আশ্রয় পায়। ইনি তেমনই একজন। আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।
অবশেষে অবশ্যই অনন্যাকে আবারও ধন্যবাদ জানাই, সে না থাকলে ইনি আমার পরিচিত হতেন আজ কিন্তু হয় তো এতটা আত্মীয়তার অনুভব হত না, কারণ কাগজে যা লেখে তার থেকে বহুগুণ বেশি কথা একজন অনুভবীর কন্ঠ থেকে শোনা যায়। অনন্যা তেমনই একজন মানুষ। যিনি নিজে তার তথাকথিত মইসম কেরিয়ার হাতছানি ছেড়ে এই মহাযজ্ঞের একজন পুরোধা। তাই অন্যনাও আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র। তার বন্ধুত্বে আমি ধন্য। আমি গর্বিত আজ আমার বোন রিয়াও এর সাথে যুক্ত। আমি নিজে সব দিকে থেকে অক্ষম, অযোগ্য একজন মানুষ হয়েও এদের সান্নিধ্যে ধন্য।
FOR LINK CLICK HERE