সৌরভ ভট্টাচার্য
25 March 2018
পাখিটাকে দেখে তারা রোজ আলোচনা করত। অনেকে তো শুনেছি কাঁদতও। এমন কাঁদত যে চোখের কাজল গালে লেগে যেত। টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিতে হত। তারপর চলত আলোচনা, তর্ক, ব্যাখ্যা, ব্যাখ্যার ব্যাখ্যা। ওই দেখো, আসল কথাটাই তো বলা হল না, কি নিয়ে আলোচনা। পাখিটা যে বন্দী গো। তার মালিক তাকে দানাপানি দেয় না, কাঠি দিয়ে খোঁচায় ইত্যাদি ইত্যাদি। তো এরা কি করে সহ্য করে? এরা যে মুক্তচিন্তকের দল।
এরকম একদিন আলাপ আলোচনা চলছে, হঠাৎ তাদের একজন মুক্তিকামী দলের সদস্যা দৌড়াতে দৌড়াতে, হাঁপাতে হাঁপাতে এসে খবর দিল - আরে পাখিটা যে উড়ে গেছে!
ব্যস! সব্বার চক্ষু ছানাবড়া। সামনের টেবিলে তখন ঢাউস ঢাউস ফাইল রাখা। তারা সব খেটেখুটে জোগাড় করেছে অ্যাদ্দিন ধরে, কবে কে কোথায় কোন বইতে মুক্তির কথা কি কি বলেছে। আর এইদিন ফাইনাল মিটিং বলে সবাই কি সুন্দর সেজেগুজে এসেছে কি বলব। তার মধ্যে বলে কিনা পাখি উড়ে গেছে!
কি করে উড়ল? অনেক খোঁজপাতি নিয়ে জানা গেল যে, সে পাখি নাকি নিজের ঠোঁটের জোরে দীর্ঘদিন ধরে একটা একটা করে শিক বেঁকিয়ে, একদিন আচমকা - ফুড়ুৎ!
পরেরদিন আবার সভা বসল। সবাই বলল, এ অন্যায়, এ অপমান, এ অবাস্তব, এ বানানো, এ ষড়যন্ত্র। খুব হইচই চীৎকার চেঁচামেচি হল। এখন শুনছি ওরা নাকি ব্যাধ খুঁজছে, বিদেশি মিহি জালের জন্য অগ্রিম টাকাও নাকি দেওয়া হয়ে গেছে।
পাখিটা শুধু এ সব কথা জানে না। না আগেরটা, না পরেরটা। সে শুধু জানে তার ঠোঁটের জোর আর পায়ের।