প্রথমঃ
রত্না বলল, আমার খুব চিন্তা হয়, সারাদিন এত খাটাখাটনি পড়ছে, রেগুলার চেক আপ করাচ্ছ না, অফিসের চাপ তো দিন কে দিন বেড়ে যাচ্ছে, চলো না কোথাও ক'টা দিনের জন্য ঘুরে আসি।
শুভাশিস কথা না বলে শুধু 'হুঁ হুঁ' করে খেয়ে যাচ্ছে। ডালের বাটিটা এগিয়ে নিতে গিয়ে দেখল ওর উপর একটা ছোটো পোকার মত কি পড়ে আছে। রত্না বলল, চিকেনটা নাও শুধু। পরমা যা ফাঁকি দিয়ে রান্না করে না। তুমি অযথা ওদের অত স্বাধীনতা দাও বাড়িতে। কাজের লোককে এত মাথায় তোলা ঠিক নয়।
শুভাশিস একটা হাড় থেকে মাংসের টুকরো ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলল, তবে রাঁধবে কে? জানোই তো আমার বাইরের খাবার সহ্য হয় না।
রত্না চুপ করে থাকল।
শুভাশিস মুখ ধুয়ে, টেবিল পরিষ্কার করে, খাবারগুলো ফ্রিজে ঢুকিয়ে শোয়ার ঘরে গিয়ে পেপারটা নিয়ে শুলো। বলল, সারাদিন যা চাপ যায় না, পেপারটা পড়ারও ঠিকঠাক সময় হয়ে ওঠে না।
রত্না অন্যমনস্কভাবে বলল, হুঁ। তারপর হঠাৎ কি একটা মনে পড়ে গেছে এমন তাড়াহুড়োতে বলল, কাল শুক্রবার, মনে আছে তো? ওরা ওয়াটস অ্যাপ করেছে?
শুভাশিস গড়িয়ে গিয়ে খাটের পাশে রাখা টেবিল থেকে মোবাইলটা নিয়ে ওয়াটস অ্যাপটা খুলে রত্নার দিকে এগিয়ে দিল।
রত্না বলল, ঠিক আছে, চলবে।
দ্বিতীয়ঃ
ঝুমা এসে তালা খুলল। একটা একটা করে জানলা খুলল। ঘরটায় সকালের আলো এসে দখল করল। ঝুমা ফ্রিজের দরজাটা খুলল। চিকেনের বাটিটা বার করে একটু শুঁকে দেখল। তারপর গ্যাস অন্ করে ওটা বসিয়ে ঘর ঝাঁট দিতে শুরু করল। কয়েক মিনিট পরেই চিকেনের বাটিটা নামিয়ে খাবার টেবিলে বসল। মুড়ির কৌটোটা পাশেই থাকে। তার থেকে কয়েক বাটি মুড়ি নিয়ে চিকেনটা ওর উপর ঢেলে দিল। মোবাইলে একটা গান চালিয়ে খেতে শুরু করল পা দুলিয়ে দুলিয়ে। খেতে খেতে এক একবার রত্নার ছবিটার দিকে তাকালো। সত্যি দাদাবাবু যা ভালোবাসত বৌদিকে। মালাটা পুরোনো হয়ে গেছে। প্লাস্টিকের সাদা ফুলের মালা। গেলবার বিবাহবার্ষিকীতে দাদাবাবু কিনে এনে লাগিয়েছিল। কি ব্যাপক বিরিয়ানি খাইয়েছিল তাকে আর পরমাদিকে দাদাবাবু।
ঝুমা ঘড়িটার দিকে তাকালো। পরমাদি এসে যাবে। পরমাদি দাদাবাবুদের কেমন একটা আত্মীয় হয়। সেই সুবাদেই ঝুমা এ বাড়িতে বিশ্বস্ত কাজের লোক হয়ে যায়। পরমাদি তার লতায় পাতায় বৌদি হয়। এখনি এসে পড়বে আর খ্যাক খ্যাক করবে, লাই পেয়ে মাথায় চড়েছিস... এই সব জ্ঞান ঝাড়বে।
তৃতীয়ঃ
শুভাশিস দরজাটা নক্ করার আগে একবার ঘড়িটা দেখল। সাড়ে আটটা। ওয়াটস অ্যাপটা অন্ করে একবার হোটেলের রুম নাম্বার আর ছবিটা দেখে নিলো। ঠিক আছে। নক্ করতেই দরজাটা খুলে মেয়েটা দাঁড়ালো। একটা শর্টস আর টি শার্ট পরা। ছবির থেকেও বেশি অ্যাট্রাক্টিভ। শুভাশিস দরজাটা বন্ধ করে দিল ঢুকে। জিজ্ঞাসা করল, আপনার ডিনার হয়ে গেছে? মেয়েটা হেসে বলল, হ্যাঁ।
এই হাসিটার সাথে শুভাশিস অভ্যস্ত এখন। গা শিরশিরানি হাসি একটা। এদের শেখানো হয় কিনা কে জানে।
মেয়েটা বলল, আপনি স্নান করবেন তো?
শুভাশিস স্নান সেরে বাইরে এসে দেখে মেয়েটা উপুড় হয়ে শুয়ে তার দিকে পিছন ফিরে একটা ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাচ্ছে। পরনে শুধু একটা গোলাপী প্যান্টি আর ব্রা।
শুভাশিস খাটে গিয়ে বসল। তার পাছার উপর একটা হাত রাখতেই মেয়েটা চিৎ হয়ে শুয়ে বলল, আপনার ডিম্যাণ্ড কি কি?
শুভাশিস হেসে মেয়েটাকে জড়িয়ে একটা চুমু খেয়ে বলল, নরমাল। মেয়েটা হাসল। মুখের ভিতর থেকে মাউথ ফ্রেশনারের গন্ধ ভেসে এলো।
শুভাশিসের টাওয়েলটা মেয়েটাই সরিয়ে নিল। ঘরের মধ্যে একটা শান্ত অস্বস্তিকর আবহাওয়া। শুভাশিসের কাছে এই ফোরপ্লে'টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফোরপ্লে'টাকে যদি সে ঠিকঠাক করতে পারে বাকিটায় অসুবিধা হয় না।
শুভাশিস মেয়েটার নাম জিজ্ঞাসা করেনি। কখনওই করে না। কারণ ওটা ওদের আসল নাম হয় না। এখন মেয়েটার নাম যেমন লিজা। এজেন্সী থেকে বলেছে। শুভাশিস জানে সেটা আসল নাম নয়। হয়ত কুসুম বা কমলিকা এরকম কত কি হতে পারে।
মেয়েটার নাভির চারপাশে হাল্কা জিভ বোলাচ্ছিল শুভাশিস, আচমকা মেয়েটা চীৎকার করে বলে উঠল, কে ওটা?
শুভাশিস বুঝল, রত্না এসে গেছে। সে আড়চোখে তাকিয়ে দেখে রত্না সোফার উপর বসে। চুলগুলো খোলা। একটা গোলাপী আভা যেন ওর চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। শুভাশিস রত্নার চোখে চোখ রেখেই একবার মনে করতে চেষ্টা করল, মেয়েটার শরীরের আকর্ষণে রত্নার ঈর্ষা জন্মিয়েছে কি? না সেরকম তো তার মনের মধ্যে কিছু হয়নি।
শুভাশিস মেয়েটাকে শক্ত করে বিছানায় চেপে ধরে রাখল। বলল, ও কিছু নয়, তোমার মনের ভুল। দেখো কোথাও কিচ্ছু নেই। মেয়েটা একবার ঘাড় উঁচু করে সোফার দিকে তাকালো, সত্যিই কেউ নেই আর। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সেটা এক হাতে মুছে মেয়েটা বলল, যা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!
শুভাশিস দেখল, রত্না মেয়েটার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে। তার মাথাটার উপর চেপে বসছে ধীরে ধীরে। মেয়েটা বলল, ভীষণ মাথা ধরে গেছে জানেন, আপনি তাড়াতাড়ি করুন আমার গা গুলাচ্ছে।
শুভাশিস মেয়েটার শরীরের উষ্ণতা অনুভব করছে, কিন্তু এটা রত্নার শরীরের উষ্ণতা নয়। আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। মেয়েটা ক্রমশঃ আচ্ছন্ন হচ্ছে। এবার রত্না আসবে। মেয়েটার কানের ভিতর থেকে রক্ত বেরিয়ে এলো। বিছানার চাদর ভিজে যাচ্ছে রক্তে। রত্না ঢুকছে ওর মধ্যে। শুভাশিস অনুভব করছে রত্নার উষ্ণতা।
শনিবার সন্ধ্যেবেলা। শুভাশিস খবর দেখছে। একজন যৌনকর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে টালা থেকে। মেয়েটার নাম কমলিকা। শুভাশিস বলল, এরকম করো কেন? রত্না বলল, ঈর্ষায়।