তখন জিয়া উল হকের ডিক্টেটরশিপ চলছে পাকিস্তানে। তো তেনার কী মর্জি হল উনি বললেন, আজ থেকে পাকিস্তানের মেয়েরা শাড়ি পরতে পারবে না। সেটা ইসলাম বিরুদ্ধ।
সাল ১৯৮৬। দু বছর হল পাকিস্তান, তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ফৈজ আহমদ ফৈজের মৃত্যু হয়েছে। ফৈজের জন্মদিন ১৩ই ফেব্রুয়ারি। সেদিন আল হামরা হলে ফৈজের জন্মদিনের জন্য বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যদিও ফৈজ নিষিদ্ধ কবি তখন। ১৯৭৯ সালে, জিয়া উল হকের ভয়ংকর অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ফৈজের হাত ধরে জন্মে গেছে সেই যুগান্তকারী কবিতা, হাম দেখেঙ্গে।
ইকবাল বানো। প্রসিদ্ধ সঙ্গীত শিল্পী। পাকিস্তানের ঘরে ঘরে ওর অনুরাগী। শুধু পাকিস্তান কেন, উর্দু ভাষার কাব্যের অনুরাগী বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষ ওঁর গানের ভক্ত। গালিব, নাসির কাজমি প্রমুখ কবির গজল ওঁর কণ্ঠের যাদুতে, গায়কিতে শ্রোতাকে পাগল করে দেয়। কিন্তু ফৈজের গজল অন্য মাত্রায় এসে পৌঁছে যায় মলিকা-এ-গজল ইকবাল বানোর কণ্ঠে।
১৩ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ সাল, প্রায় পঞ্চাশ হাজার শ্রোতায় ভর্তি হলে ইকবাল বানো এসে দাঁড়ালেন কালো শাড়ি পরে। কালো শাড়ি ওঁর প্রতিবাদের ভাষা। ফৈজের লেখা একটার পর একটা গজল শোনালেন। কিন্তু গোটা হলে আগুন জ্বলে উঠল শ্রোতাদের হাততালিতে আর উচ্ছ্বাসে যখন ইকবাল বানো ধরলেন, হাম দেখেঙ্গে। যারা যারা সেদিন শ্রোতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তাদের স্মৃতিকথা পড়লে আজও গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় এই ভেবে কী করে পেরেছিলেন সেদিন ইকবাল বানো? এত আগুন এত নিঃশব্দে লালন করে এসেছেন কী যাদুতে!
ব্যস। বানো রোষানলে পড়লেন জিয়াউল হকের। নিষিদ্ধ হলেন পাকিস্তান রেডিওতে। কিন্তু কদিনের জন্য? হকের ডিক্টেটরশিপ শেষ হল ১৯৮৮। অনেকে বলেন, এই "হাম দেখেঙ্গে' হকের ধ্বংসের সুত্রপাত ঘটিয়েছিল। পাকিস্তানের ওয়ারক্রাই, বা স্লোগানে পরিণত করেছিলেন বানো এই গানটাকে। বলা যায় আমাদের সাউথ এশিয়ার "বেলা চাও" যেন।
গানটা হালে পাকিস্তান কোক স্টুডিওতে দারুণ উপস্থাপন করেছে। সে লিঙ্কটা দিলাম। আর দিলাম বানোর গাইবার সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের লিঙ্কও। কমেন্টস বক্সে।
এসব গান হারিয়ে যেতে দিতে নেই। মানুষ হয়ে জন্মে যে মানুষ হতে পারার অনেকটা বাকি থাকে এ গানগুলো মনে করিয়ে দেয়। ফৈজ আর বানোকে আমার অন্তরের গভীরতম স্থল থেকে কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা জানাই। এমন সাহসের জন্য। এমন সৃষ্টির জন্য।।
[4 October 2024]