বিখ্যাত স্টোয়িক দার্শনিক এপিকটেটাস একটা কথা বলতেন, কোনো সমস্যাকে এইভাবে দেখতে হবে যে, তার কোনটা আমার হাতে আছে, কোনটা নেই।
কথাটা আমার মনে হয় আরেকটু বাড়ালে অনেকটা সত্য হয়। কোনটা আমার হাতে আছে শুধু না, কতক্ষণ আমার হাতে আছে। সময় একটা বড় ভূমিকা পালন করে অবশ্যই। যেমন দুদিন আগে ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে একটা খবর বেরিয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে অনেকেই রোগটা ধরা পড়ার পরেও সঠিক ও সুষ্ঠু চিকিৎসাতে আসতে দেরি করে ফেলছেন। নানা বিকল্প চিকিৎসা, ভুল চিকিৎসাতেও সময় বেরিয়ে যাচ্ছে। এটাকে মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বলছেন দ্বিতীয় শ্রেণীর দেরি। প্রথম শ্রেণীর দেরি তৈরি হয় অজ্ঞতাজনিত কারণে।
তাই বলছিলাম, আমার হাতে কোনটা আছে শুধু না, কতক্ষণ আছে সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
'ইনসাইড জব' তথ্যচিত্রটা ভীষণ আলোড়ন তুলেছিল। অন ক্যামেরা অনেককে "নাঙ্গা" করা ইত্যাদি তো আছেই, সঙ্গে আছে লোভ আর দুর্নীতি কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায় সমাজকে এবং কিভাবে সে খেসারত "সাধারণ মানুষ, গরীব মানুষকেই দিতে হয় যথারীতি", তার উপাখ্যানও আছে।
একজন বলছেন, একটা পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন উপঢৌকন হিসাবে মোটা অঙ্কের টাকা মানুষের মস্তিষ্কের সেই কেন্দ্রকেই উদ্দীপ্ত করে যে অংশ কোকেনের নেশাতেও উদ্দীপ্ত হয়।
লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু প্রবাদবাক্য। পাপী মরে সাত ঘর নিয়েও প্রবাদবাক্য। কিন্তু মরেটা কে? যারা সেদিনের সেই ভয়ংকর আর্থিক রিসেসানের কাণ্ডটি ঘটিয়েছিল, তারা মোটা টাকা নিজের পকেটে নিয়ে বহাল তবিয়েতে ঘুরে বেড়িয়েছে। কিন্তু কাজ হারিয়ে দারিদ্র্যের মুখে পড়েছে বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ। যদি না আইটি ইণ্ডাস্ট্রি এসে বাঁচাতো মার্কিন মুলুককে তাদের অবস্থাও করুণ হত। যদিও সেখানে চাকরি পেতে গেলে কলেজ পড়ার যা টাকা, সে জোগাবে কতজন আমেরিকান?
আজ হঠাৎ এসব লিখছি কেন? সেদিনের সে আসন্ন সুনামির কথা জানিয়ে অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন রঘুরাম রাজন। আসলে সব কিছু যখন খুব ভালো চলছে মনে হয়, তখন একবার সতর্ক হয়ে চারদিকে তাকিয়ে নেওয়া ভালো। আর দিন দিন আমাদের অপ্রিয় সত্য শোনা, মতের বিপক্ষে কথা শোনা এমন দুর্লভ অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে যে এ সব আলোচনাও বেকার। কদিন আগে "ডোন্ট লুক আপ", এখনের "লিভ দ্য ওয়ার্ল্ড বাহাইন্ড" এসব সিনেমা তো হচ্ছেই। একই বিষয় নিয়ে, অস্বস্তিকর সত্যকে আনতে সামনে। ক্রিটিকাল ভিউতে দেখতে সব কিছুকে। কিন্তু শোনার ইচ্ছা নেই আমাদের। জাগায়ো না আমায় জাগায়ো না।