Skip to main content

সিদ্ধেশ্বরবাবু ওরফে সিধাইবাবু যখন জানলেন তার ইচ্ছার কোনো ধার জগদম্বা ধারেন না, তখন থেকে তিনি নিজের ইচ্ছা আর জগদম্বার ইচ্ছা দুটোকেই পাত্তা দেওয়া ছেড়ে দিলেন। মনটা সারাদিন ফুরফুরে থাকে। নিজের মনে কোনো ইচ্ছা হলেই বলে, ভাগ শালা, শুনবই না। আর চলতে ফিরতে কোনো মন্দির পড়লে বলে, যা খুশী করো গে.. আমার তাতে কি?

একবার ফুচকা খেতে গেলেন। তেঁতুলগোলা জলে যে আরশোলা ছিল কে জানবে? যেই না হাতে ফুচকা দিয়েছে, অমনি মড়া আরশোলা ফুচকার গর্তে চিৎ হয়ে ভেসে উঠেছে।

এখন এই ফুচকায় আরশোলা ভাসানোর ইচ্ছা তো তার না। কার? যার ইচ্ছা আরশোলা নিয়ে তাঁর মন্দিরে গেলেন। মায়ের সামনে আরশোলা রেখে বললেন, এতেই জব্দ করবি ভেবেছিস? শুনবই না তোর ইচ্ছা। এই নে তোর ইচ্ছা তোর কাছেই রেখে গেলাম।

একবার ছাদে ঘুড়ি পাড়তে গিয়ে পা ভাঙলেন। হাস্পাতালে শুয়ে থাকলেন একমাস। যে-ই আসে দেখা করতে তাকেই বলেন, এ আমার ইচ্ছা না রে বাবা, আমি তো ঘুড়িটা পেড়ে একটু ওড়াবো ভেবেছিলাম। তা না…

যা হোক। হাস্পাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার মন্দিরে এলেন। বললেন, কি চেয়েছিলি খুলে বল তো… হাঁটব না? শুয়ে শুয়ে বাড়িশুদ্ধ লোকের গালাগাল খেয়ে বেঁচে থাকব? যত্তসব!

সমস্যাটা হল মেয়ের বিয়ে নিয়ে। যতই খুঁজুন, পাওয়া আর যায় না। শেষে একদিন সবাই বলল, মায়ের ইচ্ছা যখন তখনই হবে।

তিনি মায়ের মন্দিরে গেলেন। মাকে বললেন, তাই নাকি? সবাই যা বলছে, তাই সত্যি?

আবার খোঁজা শুরু হল। এবারে পাওয়া গেল। সবাই বলল, মা চাইলেন তাই হল।

ধুমধাম করে বিয়ে হল। বিয়ের আগের দিন রাতে মন্দিরে গেলেন, বললেন, আসিস পারলে। ক'টা মিষ্টি ঠাকুরঘরে রেখে দেব।

বিয়ে হল। সবই ঠিক চলছিল। কিন্তু মেয়েটা বিধবা হল সাড়ে চার বছরের মাথায়। ফিরে এলো বাবার কাছে। বাবা কিছু বললেন না। চুপ।

একদিন সন্ধ্যেবেলা মেয়েকে নিয়ে বসলেন মন্দিরের বারান্দায়।

মেয়ে বলল, কেন হল বাবা?

উনি হাসলেন। বললেন, আমার ইচ্ছায় তো কিছু হয় না রে মা। না তো তোর ইচ্ছায়। যা হয় ওই উনি…

মেয়েটার চোখের কোল জলে ভরে এলো। অভিমানের সুরে বললেন, তাও কেন এলাম আমরা?

সিদ্ধেশ্বরবাবুর চোখের পাতা ভিজে এলো। বললেন, আমাদের উপর জোর তো করেন না… তুই চাইলে ওনাকে অস্বীকার করেও তো থাকতে পারিস… আমি যেমন থাকি…. যে নিজেকে চাপায় না… তার কাছেই তো নিরাপদ রে…. সুখদুঃখ তো থাকবেই… ধ্রুবতারার থেকে চোখটা না সরলেই হল,.. ডুবতে ভয় নেই… তবু তল পাব… হারালে তল আর জল দুই-ই যাবে যে।