Skip to main content

cd1

 

দেখতে দেখতে অনেকবার মনে হল, থাক, আর নেওয়া যাচ্ছে না।

আমাদের জেনারেশানের অনেকেই যারা ইংরাজি গান সেভাবে শুনতাম না তাদের কাছে সিলেন ডিওন হয় তো বা প্রথম যে ছুঁয়ে গিয়েছিল। অবশ্যই টাইটানিকের সেই বিখ্যাত গান দিয়ে - মাই হার্ট উইল গো অন। আমার বাড়িতে আসা সেই প্রথম ইংরেজি গানের ক্যাসেট। অনেক দাম নিয়েছিল। গায়ে লেগেছিল। কিন্তু উপায় কী, সেদিন তো ইউটিউব ছিল না।

তারপর একে একে অনেক গান শোনা হল। ফ্র‍্যাংক সিনাত্রার সঙ্গে বিজ্ঞানের কারিগরিতে দুই যুগের মেলবন্ধন ঘটিয়ে কী আশ্চর্য গান, তাও শুনলাম। তারপর কোথায় যেন সুতো ছিঁড়ে গেল। নানা কাজ। নানা ব্যস্ততা।

কদিন আগে হঠাৎ প্রাইম ভিডিওতে এই তথ্যচিত্রটা দেখে থমকালাম। কাগজে পড়েছিলাম সিলেন ডিয়ন অসুস্থ। কিন্তু এইভাবে!!

ওঁর রোগ একটা স্নায়ুর রোগ। স্টিফনেস সিন্ড্রোম। গলাকেও স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। গান কেড়ে নিতে চাইছে। গোটা জীবনকে বিশ্বের আঙিনা থেকে কেড়ে এনে চৌকাঠের মধ্যে বন্দী করে দিতে চাইছে।

আই কান্ট লাই এনি মোর...... .আই কান্ট লাই.... লাই... আর কদ্দিন মিথ্যা অজুহাতে শো বন্ধ করে দেব। বাট দ্য শো মাস্ট গোজ অন..... না না না। দ্য শো শুড স্টপ নাও।.....

আমি এতদিন যেন একটা আপেল গাছ ছিলাম। আমার সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত মানুষ। আমি আমার ডাল থেকে একটা একটা আপেল পেড়ে তাদের দিতাম। তারা কী আনন্দে সে আপেল নিয়ে চলে যেত।

হঠাৎ আমার ডাল ভেঙে পড়ল। কিন্তু ওই যে ওরা এখনও লাইনে দিয়ে....আমি কী দেব ওদের....ওদের চলে যেতে বলো....

যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। বিকৃতি আসছে সারা শরীরে। হয় তো মনে হবে কেন ক্যামেরাটা অফ করে দিচ্ছেন না পরিচালক। কেন দেখছি আমি?

একটা গান রেকর্ডিং করলেন। এরই মধ্যে। সে গানটা বহুবার চেষ্টায় হল এক রকম। সে গানটা যখন বাজছে রেকর্ডিং রুমেই নাচছে সিলেন ডিওন। কী অসহ্য সুন্দর নাচ। যে মানুষটার শিরায় শিরায় গান, এই তীব্র অনুভব....... সে বাঁচে কী করে গান ছাড়া? শেষ দৃশ্যে সিলেন বলছে, আমি কিছুতেই থামব না....কিছুতেই না...না না না।

রবীন্দ্রনাথের গান বন্ধ হয়েছিল একবার। লিখেছিলেন, "আমার কণ্ঠ হতে গান কে নিল ভুলায়ে/ সে যে বাসা বাঁধে নীরব মনের কুলায়ে"।

সিলেন এ গান জানেন না। জানলেও এ গান তাকে সান্ত্বনা দিত না আজ। যতক্ষণ শ্বাস, যতক্ষণ প্রাণ, ততক্ষণ গান তার।

ভাগ্যের এ পরিহাসের কোনো ব্যাখ্যা জানা নেই আমাদের। শুনলাম অলকা ইয়াগনিক শ্রবণ শক্তি হারাচ্ছেন। কেন? কোনো উত্তর নেই। আমরা ভাবি এক, হয় এক। কেন? কোনো উত্তর নেই। কিন্তু লড়াইটা তো আছেই। কী তীব্র ভালোবাসা থাকলে তবেই সিলেন ডিওনের মত লড়াই করা যায়।

আমি দেখতে দেখতে ভাবছিলাম যাদের সে ভালোবাসা কোনো কিছুর উপরেই নেই? প্রতি মুহূর্তে যখন নিজেকে বোঝা লাগতে শুরু করে? তারা? কী করবে তারা? আশেপাশের মানুষ কদিন? কতদিন অন্যের সান্ত্বনায় জীবন কাটানো যায়? কতদিন আশায় বুক বাঁধা যায়, যখন একটা একটা করে প্রদীপ নিভতে শুরু করছে।

সিলেন ডিওনের এই তথ্যচিত্রটা দেখতে পারেন। অন্তত "রাজার অসুখ" যাদের তাদের বাদ দিয়ে, অনেকের ক্ষেত্রেই বেঁচে থাকাটাকে আরো দুর্মূল্য মনে হবে। দুর্ভাগ্যকে অত্যন্ত বাস্তব মনে হবে। জীবন স্বপ্ন নয়। জীবন লড়াইও নয়। আবার দুটোই। দর্শন না। সান্ত্বনা না। একটা নিটোল চেতনার বুদবুদ। তার চয়েস নেই। শুধু কিছুক্ষণের অস্তিত্ব আছে। গরলে অমৃতে মেশানো। পান করতেই হবে।

cd2