অনেকদিন পর রোদ উঠেছে দেখে, বউটা কাচা কাপড় জামা মেলবে বলে ছাদে উঠল। ছাদে কাপড়গুলো মেলতে মেলতেই কোথা থেকে আকাশ জুড়ে এল ঘন কালো মেঘ করে।
সে অবাক হল। তার হাসিও পেলো। ভাগ্য বদলায়নি একটুও! সেই রাতটা মনে পড়ল। যার সাথে পালাবে বলে এক কাপড়ে বেরিয়ে পড়েছিল, তার সেই প্রেম, স্বপ্ন- সে আসার আগেই, আগের ট্রেনে হয়েছিল দেশান্তর।
সারা রাত স্টেশানে বসেছিল একা। তারপর একটা মৃত অভ্যাসের গলায় মালা দিয়ে, সংসারের স্রোতে ভেসেছে। তার নিজের বলতে যা কিছু ছিল, সেই রাতেই তো শেষ হয়েছে। এখন যা কিছু, তা শুধুই সমাজের, হিসাবের, নিয়মের।
বৃষ্টি এলো। অকারণ বৃষ্টি, বিনা ভূমিকার বৃষ্টি। তার না-চাওয়া বৃষ্টিতে সে ভিজল। ভিজে কাচা কাপড় জামা আবার ভিজল। ছাদের শুকনো দড়ি ভিজল। ছাদ ভিজল, কার্ণিস ভিজল। বাগান ভিজল, পাতকুয়ো ভিজল।
তার হঠাৎ মনে হল, এ বৃষ্টি যেন তার পলাতক প্রেমিক। লুকিয়ে আচমকা তার সাজানো নিস্প্রাণ সংসারে আছড়ে পড়েছে, ছদ্মবেশে, পুরোনো ভুলটা শুধরে নিতে। তার বুকের ভিতরটা কামড়ে ধরল কেমন। গলা বুজে এলো কান্নায়। বিদ্যুৎ চমকালো খুব জোরে হঠাৎ। ছাদে লুটিয়ে পড়ল সে। কত দিনের কান্না? এত কান্না ছিল? এত অপেক্ষা ছিল কোন বুকেতে? মরেনি এখনো!
সে কাঁদছে। অঝোর বৃষ্টিতে ভেজা নারকেল গাছ, সুপুরী গাছ, চাতক, আর এক আকাশ কালো মেঘকে সাক্ষী রেখে সে কাঁদছে। ভিজে কাঁপতে থাকা কাকটার মত কেঁপে কেঁপে উঠছে তার চরা পড়ে যাওয়া বুক। চোখের জল, বৃষ্টির জলে একাকার।
সে জল ছাদের থেকে পাইপ বেয়ে নেমে পড়ল বাড়ির নর্দমায়। বাড়ির নর্দমার জল গেল পাড়ার নর্দমায়। সে জল গড়ালো গঙ্গায়। সেখানে মিশছে গঙ্গার জলের সাথে বৃষ্টির জল, আর তার সাথে সে কান্না। গঙ্গার বুকের মাতাল ঢেউ, দুই কূলে আছড়ে পড়ছে...ঝপাস....ঝপাস..। দুকূল আজ ভেঙে ফেলবে যেন!
আক্রোশ? না ক্ষোভ?
সৌরভ ভট্টাচার্য
28 August 2015