হিরি রেগে গেল। প্রচণ্ড রেগে গেল। রাগার কারণও ছিল। দিনে সাত আটটা বাড়ি বাসন মাজত। তো তার মধ্যে দুই তিন বাড়ি যদি অতিরিক্ত বাসন করে ফেলে রাতে, কার না রাগ হয়! স্বাভাবিক। তো হিরি কী করল, ঠিক পুজোর আগে কাজে আসা বন্ধ করে দিল। লোক পাঠালে বলে, আজ আমার জ্বর। পরেরদিন বলে, আজ আমার দাঁতে ব্যথা। আরেকদিন বলে, আজ আমার সোয়ামির নাইট ডিউটি।
সবাই হাল ছেড়ে দিয়ে অন্য লোক খুঁজতে লাগল। রেল কলোনিতে তখনকার দিনে কাজের লোক পাওয়া ভীষণ সমস্যার। তো যা হোক, পুজোর আগে একজনকে পাওয়া গেল, কিন্তু সে পুজোর বোনাস নিয়ে তবেই কাজে আসবে। কী করা যায়। তাই ব্যবস্থা করতে হল।
মহালয়ার আগের দিন, হঠাৎ রাতে হিরি এসে হাজির। বলল, আমায় বোনাসটা? বাড়ির লোক রেগে বলল, কিন্তু তুমি কাজই করোনি প্রায় একমাস। তার বেলা?
হিরি গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, আমার বোনাসটা?
বাড়ির লোক বলল, আচ্ছা মুশকিল তো... তুমি তো এ কদিন বাড়িতেই বসেছিলে ভাই.....
হিরি দুবার কেশে বলল, আমার বোনাসটা?
বাড়ির লোকের মাথা গরম হল। বলল, ইয়ার্কি পেয়েছ? কিচ্ছু দেব না... রাস্তা দেখ।
হিরি কালো মুখের মধ্যে সাদা ধবধবে দাঁত বার করে বলল, বলাইয়ের মা তো? নতুন যাকে কাজে রেখেছ.... আমি বললে সেও কাজে আসবে না কাল থেকে.... আমাদের কমিটি আছে.... একবার একঘরে করে দিলে ওকে..... আমার বোনাসটা?
এইবার বাড়ির লোকে মুশকিলে পড়ল। এ ওর মুখ চাওয়াচায়ি করে টাকাটা দিয়ে দিল। বলল, কাল থেকে বলাইয়ের মা আসবে, না তুমি?
হিরি উত্তর দিল না। অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। সেই অন্ধকারে তখন এদিক ওদিক বাজি ফাটছে। ফাটবে না? আমাদের এদিকে, মানে কাঁচরাপাড়ায়, হালিশহরে মহালয়ায় প্রচণ্ড বাজি ফাটে। পিকনিক হয়। আরো আরো অনেক কিছু হয়। আজও যেমন হচ্ছে। এখন তো কম তাও, কাল কাক ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণর পিলে কাঁপিয়ে বাজি ফাটবে। আমি অসুস্থ বাবাকে নিয়ে আতঙ্কে থাকব কখন শেষ হবে বলে। যাই হোক দায়িত্ববোধটা তো আর সিলেবাসীয় নয়। ওটা যেন কী করে জন্মায়। আবার জন্মায়ও না। অপযুক্তি জন্মায়। "ফাটাবই তো"।
আজ কেন এসব মনে পড়ল? আজ সন্ধ্যেবেলা হঠাৎ ওই হিরিদের পাড়ার মধ্যে দিয়ে আসতে হল। দেখলাম ইয়াব্বড় বড় মাইক লাগিয়ে, "এমন মধুর সন্ধ্যা" গান হচ্ছে..... উনুনে আঁচ চড়েছে..... মোচ্ছব হবে... মোচ্ছব।