সৌরভ ভট্টাচার্য
25 March 2020
এক মুখ দীর্ঘদিনের কাঁচাপাকা দাড়ি, গালে হাত দিয়ে হেসে বলে, আলসেমি।
মুদির দোকান। সামনে একটা চাপাকল। দোকানের পাশ দিয়ে গলি। দোকানের সামনে রাস্তা। গাড়িটাড়ি যায় না বড় একটা। সাইকেল, বাইক, রিকশা, হাঁটা মানুষ - তাও খুব বেশি নয়।
দোকানেও যে মা লক্ষ্মীর খুব একটা আনাগোনা নেই সে দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু দোকানির বুক জোড়া মহাদেবের হৃদয়, সদাহাস্য আশুতোষ মুখ। তবে গলাখানা বাজখাঁই। হাসির কথা না ধমক তা বুঝতে নতুন লোকের সময় লাগে। বয়েস হল ষাটের কাছাকাছি। লোকে এড়িয়েই চলে। এত অপ্রাসঙ্গিক কথা টেনে আনে যে লোকের না হয় উত্তর দেওয়ার ইচ্ছা, না থাকে হাতে অত সময়।
সেদিন বিকালে খুব একটা ঝড় হয়ে গেল। সন্ধ্যেবেলা চারদিক এলোমেলো থম থম করছে। সে দোকান ছেড়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে। জিজ্ঞাসা করলাম, তারা গুনছেন নাকি দাদা?
উনি আকাশের দিকে তাকিয়েই বললেন, হেলিকাপ্টারটা গেল কোনদিকিনি?
হেলিকপ্টার?
আর বলছি কি? আমায় নিতে আসার কথা আজ, ঘুরে গেল মাথার উপরে কতবার, কি হল বলুন তো? আমায় কি খুঁজে পাচ্ছে না?
কোমরে দুটো হাত। মাথাটা আকাশের দিকেই তোলা। পাশ থেকে দু একজন কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে চলে গেল।
বললাম, তা যেতেন কোথায়?
বলল, যাওয়ার জায়গা কি অভাব আছে? পুরী, কাশী, হরিদ্বার, দার্জিলিং... গেছেন?
গেছি
কিসে, ট্রেনে তো?
হুম…
মেলা ভাড়া?
তা একটু
হোটেলে থাকার ভাড়া? খাওয়ার খরচ?
তাও আছে...
হেলিকাপ্টারে গেলে আপনার কিস্যু লাগত না...
হাসতে হাসতে মাথাটা আকাশ থেকে নামালেন।
কেমন বুদ্ধি করেছি বলুন? যাব, টুক্ করে উপর থেকে দেখব, হাত জোড় করে প্রণাম করব... বাবা বিশ্বনাথ... বলতে বলতে হাতদুটো কপালে ঠেকালেন... আর আপনারা সেই ট্রেনে... হোটেলে....
বলতে বলতে সারা শরীর দুলিয়ে তুমুল হাসি...হাসতে হাসতে চোখে জল.....
কে পাঠাচ্ছে বলুন তো? মুখ্যমন্ত্রী... হুম, মমতা....আমার কোনো জায়গা ঘোরা হয়নি যে.....
হাসির সাথে গলায় জল চলকানো সুর... কুঁচকানো চোখদুটোর কোণায় কয়েক বিন্দু জল
বললাম, আসবে হেলিকপ্টার.... অপেক্ষা করুন...
হাসতে হাসতে বললেন, আলবাত আসবে....
আকাশ জুড়ে বিদ্যুৎ খেলে গেল। কালো মেঘের দাম্ভিক শরীর মুহুর্তে উজ্জ্বল হয়ে মিলিয়ে গেল আবার অন্ধকারে।