সৌরভ ভট্টাচার্য
15 April 2018
আজ বহুক্ষণ ধরে কলেজস্ট্রীট পাড়া চষে বেড়ালাম। টুলে বসে, উবু হয়ে বসে, দাঁড়িয়ে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিলাম। পুরোনো বইয়ের গন্ধর সাথে নতুন বইয়ের গন্ধ মিলেমিশে একাকার। তার সাথে বহু মানুষের গায়ের গন্ধ, ঘামের গন্ধ।
হঠাৎ ঝড়ের মত হাওয়া দিল। বিদ্যুৎ এর ঝলকানিও দেখলাম ট্রামলাইনের তারের ফাঁক দিয়ে। আবার বইয়ে ডুব দিলাম। প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের নানা মস্তিষ্ক আর হৃদয়ের মন্থনজাত সম্পদের মধ্যে মাথা ডোবালাম। ঘ্রাণ নিলাম। মানুষ যুগ যুগ ধরে লড়েছে। কিছু তার পড়ে পাওয়া ধন না তো। আজও লড়ছে। আজ যে মানুষটার জন্মদিন ছিল সারাদিন তার কথা মনে আসছিল। আমি আম্বেদকরজির কথা বলছি। বারবার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে যাচ্ছিলেন,"আমি পেরেছি কিন্তু। উঠে আসতে, সোজা দাঁড়াতে। ভাগ্যের হাতে, পরিস্থিতির হাতে নিজেকে ছেড়ে দিইনি কিন্তু। তুমিও ছেড়ো না"...
সাথে সাথে বইমেলা, কলেজস্ট্রীটের অসংখ্য বইয়ের মলাটগুলো গলা মিলিয়ে বলতে শুরু করল, "হাল ছেড়ো না...হাল ছেড়ো না..হাল ছেড়ো না".... আরো বলল, "মানুষ শুধু চেষ্টাই করতে পারে দেখো"..সত্যিই তো তাই। সেই প্রাচীন যুগের ছাপা অক্ষরে আসা মানুষটার সাথে আজকের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া মানুষটাও একই কাজ করে চলেছেন, চেষ্টা...তবু চেষ্টা..
এই চেষ্টা করার চেষ্টাটাই সাধনা। কারণ মাঝে মাঝে সময়ের পাঁকে পা আটকে নিশ্চেষ্ট হয়ে ভবিতব্যের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ধান্দা করিনিও যে তা তো নয়! কিছু লাভ হয়নি। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা আধলা ইঁটের মত মনে হয়েছে নিজেকে। সারমেয়ের রেচনের উদ্দীপক হওয়া ছাড়া আর কিছু কাজে আসা যায় না সে অবস্থায়। অগত্যা চেষ্টার চেষ্টাই চালিয়ে যাওয়া, এটাই ব্রত।
নতুন নতুন কত মুখ দেখলাম, কত উদ্দীপনা, উৎসাহ দেখলাম..কে বলতে পারে এদের মধ্যে থেকেই ভবিষ্যতের একজন কাণ্ডারি জন্মাচ্ছে কিনা? আমি আশাবাদী। জন্মাবেই।
সব্বাই ভালো থাকুন। সুখে থাকুন, যন্ত্রণায় থাকুন, আরামে থাকুন, ব্যারামে থাকুন, শান্তিতে থাকুন, অশান্তিতে থাকুন - যাতেই থাকুন ভালোবাসায় থাকুন।
শুভ বাংলা নববর্ষ।