Skip to main content

তুমি সান্ত্বনা পেতে চাও? যে কোনো কিছুর সহজ ব্যাখ্যা পেতে চাও? জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজতে চাও? জীবনের অর্থ পেতে চাও?

অথোরিটি খোঁজো। সে অথোরিটি যা কিছু হতে পারে। যে কেউ হতে পারে। গুরু, দল, মত, নীতি, ভাব ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এর কোনোটাই যদি নাও পেতে চাও, যদি ভয় থেকে মুক্ত হতে চাও…. তবুও তুমি আমি অথোরিটি খুঁজি। যেখানে আমি আমার ইণ্ডিভিজুয়ালিটির ভার থেকে নিজেকে মুক্তি দিই।

ইণ্ডিভিজুয়ালিটির ভার আমি কাকে দেব? এসো গুরু, আমায় নাও। এসো ঈশ্বর, আমায় নাও। এসো দল, আমায় নাও। এসো মতাদর্শ, আমায় নাও। এসো ভাব, আমায় নাও।

আমার মধ্যে যতক্ষণ ইণ্ডিভিজুয়ালিটি থাকবে ততক্ষণ হাজার একটা কুসংস্কার থাকবেই। সে যতই উপাদেয়, লাভজনক, চলনসই হোক না কেন, থাকবে। কারণ আমি নিজেকে একজন ইণ্ডিভিজুয়াল দেখছি। ইণ্ডিভিজুয়াল মানে আমাকে আর ভাঙা যায় না, নট ডিভিসিভল। আমি একটা মৌলিক সত্তা।

এখন এত বড় চলমান, ঘটমান সংসারে এমন একটা নিরেট, অবিভাজ্য সত্তা নিয়ে আমি করবটা কি? তাকে নাম, খ্যাতি, সফলতা, বিত্ত, সুখ সব দিয়েও তো দেখি তার ভার কমানো যায় না। টম অ্যাণ্ড জেরির সেই পুচকে 'অলওয়েজ হাংগ্রি' ক্ষুদে ইঁদুরের মত সে সব সময় খাই খাই করেই যাচ্ছে। যার যা আছে সব তার চাই। যেখানে যা হচ্ছে সব তার জানা চাই। সারা জগতকে সে তার মত করে চায়। এ তো মহাজ্বালা। তবে?

এইখানেই তো গোলমালের শুরু। তো এই ভয়ানক অবিভাজ্য ইণ্ডিভিজুয়ালিটির হাত থেকে নিস্তার কি নাই? আছে। মানুষ এক অবিভাজ্য ইণ্ডিভিজুয়ালিটির হাত থেকে বাঁচতে আরেক বড় ইণ্ডিভিজুয়ালিটিকে ডেকে আনল। ঈশ্বর, দল, গুরু, ভাব। সে বলল, এই দেখো, তুমি ভাঙবে না বলছিলে না? এই দেখো এই হল আসল মৌলিক পদার্থ। একে ধরে থাকলেই তোমার যাবতীয় সমস্যা মিটে যাবে। কি সমস্যা? না এই জগদ্দলস্বরূপ ইণ্ডিভিজুয়ালিটির সমস্যা। না না, কোনো বস্তুজগতের সমস্যা নয়। এ মানবিক মানসিক সমস্যা। এই হল সান্ত্বনার পথ। পা গুটিয়ে পথে নামার ছক। পুব আকাশে সূর্যাস্ত দেখার শখ।

দেখো সেই আদিম কবিতা, আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেউ অবনী পরে… ইত্যাদি ইত্যাদি..

কিন্তু বাস্তবে তো আমরা আমাদের এই অতিজাগতিক ইণ্ডিভিজুয়ালিটির চাপেই পিষে যাচ্ছি। ত্রাণের রাস্তা খুঁজছি। রিল / শর্ট ভিডিও দেখিয়ে ভোলাচ্ছি, দুষ্টুমি করে ভোলাচ্ছি, পাপ-পুণ্যের হিসাবে মেতে ভোলাচ্ছি, সমাজে নানা কাল্পনিক বিধিনিষেধ বানিয়ে ভোলাচ্ছি, কালচারের নামে ভোলাচ্ছি, মানুষকে নানা কাল্পনিক তত্ত্বে আলাদা করে করে, একে ওকে এই তাকে সেই তাকে সাজিয়ে ভোলাচ্ছি, মাটির উপর দাগ টেনে "আমরা তোমরা" করে ভোলাচ্ছি…. এ লিস্ট শেষ হবে না। মোটকথা ভোলাচ্ছি। কাকে? না আমার কখনও ইতর, কখনও মহাপুরুষতুল্য ইণ্ডিভিজুয়ালিটিকে ভোলাচ্ছি।

এখন কথা হল অনেকে তো এই ইণ্ডিভিজুয়ালিটিকেই আলাদা করে টের পাননা। এই ইণ্ডিভিজুয়ালিটির যে প্রাক কণ্ডিশনিং এই সে জীবন পথে গড়ায়মান সেটাই সে স্পষ্ট করে বোঝে না। তড়বড় তড়বড় করে গড়িয়ে যায় আর ভাবে আমি একটা কেউকেটা, আহা আমি কি স্বাধীন। ঘোড়ার ডিম। হঠাৎ করে যেই না গ্যাসবেলুনটা ফুস করে ফেটে যায়.. ব্যস…. সব ফুস!

ইণ্ডিভিজুয়ালিটির হাত থেকে আমরা নিস্তার পাই ঘুমের মধ্যে। শান্তির ঘুম। কোনো দায় নেই। স্বপ্ন আমার চিত্তপটে হলেও প্রত্যক্ষভাবে তো আর আমার ইচ্ছাধীন নয়! অগত্যা দায়মুক্ত। আমি এই ঘুমের তত্ত্বটা জানি। তাই আমি জেগে থেকেও আরেকটা ঘুম চাই। জাগা ঘুম। তখনই ওই ঈশ্বর, গুরু, মত, দল, ভাবের ডাক পড়ে। দে আমায় ঘুম পাড়িয়ে দে। মানে আর কি আমার এই কণ্টকাকীর্ণ ইণ্ডিভিজুয়ালিটির কানে কানে ঘুমপাড়ানি গান গা রে! আমি ঘুমাই।

আর যদি না ঘুমাই। তবে যন্ত্রণা। তবে ছটফটানি। তবে অ-স্বস্তি। তবে অতৃপ্তি। তবেই জীবন। আমরণ জীবন। যদ্দিন না প্রকৃত জ্ঞান বা উপলব্ধি এসে আমার ইণ্ডিভিজুয়ালিটিকে গলিয়ে দিচ্ছে। আমি সীমার মধ্যে অসীমের বাঁশি শুনছি। আগেরটা ছেড়ে পরেরটা পাওয়া যায় না। যারাই চেষ্টা করেছে, নিজেকে ঠকিয়েছে, অন্যকে ঠকিয়েছে, অন্যের দ্বারা ঠকেছে। তাই যারা সত্যি চলেছে, পুড়েছে। আর যারা তাদের নকল করেছে, শুধুই ঘুমিয়েছে। আজও ঘুমাচ্ছে। আর যারা ঘুমাতে চায় তাদের সঙ্গে, তাদেরও কাঁথাবালিশ পেতে পাশে ঘুমাতে ডাকছে।

সাধু সাবধান!