বাবার লটারীর দোকানে বসে আছে তিন্নি। সে ক্লাস টু-তে পড়ে। বাবার দোকানে হালখাতা করতে কেউ আসে না। রাস্তায় প্রচুর ভিড়। সবাই কি সুন্দর সুন্দর সেজে রাস্তায় বেরিয়েছে। বাচ্চুকাকার সোনার দোকানে উপচে পড়ছে ভিড়। সরবত, ফুচকা কত কি খাচ্ছে সবাই। তিন্নিও মায়ের সঙ্গে গিয়েছিল। চারটে ফুচকা আর ম্যাঙ্গো ফ্লেভার সরবত খেয়েছে।
তিন্নি বাবার দোকানের
পাশে একটা টুলে বসে আছে। দোকান কোথায়? এটা তো একটা বড় ছাতা। তার
তলায় একটা টেবিল। টেবিলে রাখা কত কত টিকিট। কেউ কেউ অনেক টাকা পায় নাকি। বাবা পায়
না। বাবা কাটে না।
বাস দাঁড়ালো একটা। ৮৫, এটা কাঁচরাপাড়া
থেকে ব্যারাকপুর যায়। একজন দাদু নামল। হাতে লাঠি। পা অল্প অল্প কাঁপছে। নেমেই বলল, আমি একটু বসব?
তিন্নি তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে
বলল, বোসো… তোমার কি সুগার কমে
যাচ্ছে?
এই অসুখটা তিন্নি জানে।
তার ঠাম্মির হয়। তার মা একটা হোটেলে বাসন মাজতে যায়। তাকে শিখিয়ে গেছে, ঠাম্মির ওরকম
হলেই যেন সে চিনি খাইয়ে দেয়।
তিন্নি দৌড়ে পাশে রতন
জেঠুর চায়ের দোকানে গিয়ে বলল, শিগগিরই আমায় চিনি দাও
জেঠু… দাদুটার সুগার কমে যাচ্ছে…
এক মুঠো চিনি এনে দাদুকে
বলল, হাঁ করো..
দাদু কিছুর বলার আগেই
নিজেই মুখটা হাঁ করিয়ে চিনিটা পুরে দিয়ে বলল, এবার চুপ করে চোখ বন্ধ
করে বসে থাকো। আমি একশো গুনছি, দেখো তুমি ঠিক হয়ে যাবে।
তিন্নি চোখ বন্ধ করে এক, দুই, তিন, চার গুনে চলেছে।
এক একবার আড়চোখে দেখে নিচ্ছে দাদু চোখ খুলেছে কিনা। দাদুর চোখ বন্ধ।
একটু পর যতীন রায়, বয়েস ছেষট্টি
ছুঁয়েছে, তিন্নির হাতটা ধরে বলল, আমায় বাঁচালে গো মা আজ..
তিন্নির বাবা এতক্ষণে কথা
বলল, ওর ঠাকুমার ডায়াবেটিস তো… ও জানে এসব…
তিন্নি বলল, দাদু তুমি আমার
বাবার দোকানে হালখাতা করবে? বাবার দোকানে কেউ হালখাতা
করেনি দেখো না!।
তিন্নির বাবা লজ্জায় বলে
উঠল, ছি ছি… মেশোমশাই আপনি ওর কথা
শুনবেন না…. তিন্নি ওরকম বলে না…. তুমি মায়ের কাছে যাও…
যতীন রায় বলল, না না, আমি তো আজ লটারির
টিকিট কিনবই… আজ নতুন বছরের প্রথম দিন… দাও দাও তুমি….
তিন্নি বাবার কানে কানে
কিছু বলল। অমিত তিন্নির হাতে টাকা দিল। তিন্নি রাস্তা পেরিয়ে ওপারের দোকানে চলে
গেল। যাওয়ার আগে বলে গেল, দাদু তুমি চলে যেও না
জেনো…. আমি আসছি…
তিন্নি ফিরল একটা কেক
নিয়ে। বাপুজী কেক। দাদুর হাতে দিয়ে বলল, আমরা তো সরবত ফুচকা করতে
পারিনি। তুমি এটা খেও।
দাদু সজল চোখে তিন্নিকে
আদর করে বলল, অনেক বড় হও মা।
তিন্নি অবাক হয়ে দেখল
দাদু কত টিকিট কেটেছে!
এর কয়েক দিন পর অমিত দেখল
তিন্নি একটা নতুন স্কুলব্যাগ নিয়ে ঢুকছে। অমিত অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, কে দিল তোকে
তিন্নি?
তিন্নি বলল, সেই দাদুটা গো।
দাদুর নাকি লটারিতে পাঁ… চ… শো টাকা উঠেছে।
অনেক টাকা না বাবা?
অমিত বলল, অনেক মা… অনেক।