Skip to main content

        গুরু যেদিন ব্যক্তিত্ব থেকে ব্যক্তি হল সেদিনই বিপদ হল। বিদ্যা আর দক্ষতার বলে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, উকিল, রাঁধুনি, মুচি, জমাদার। কিন্তু গুরু হন ব্যক্তিত্বের বলে, ততটা বিদ্যা আর দক্ষতার জন্য না। 

        গুরু আর শিক্ষকের পার্থক্য হল, গুরুকে ব্রহ্ম-বিষ্ণু-মহেশ্বর স্তবের যোগ্য হওয়ার দায় নিতে হয়, কিন্তু শিক্ষকের সে বালাই নেই। এইখানেই শুরু হল গুরুবাদের ফাঁকির গল্প। যেন বই হয়ে দাঁড়ালো পদার্থবিজ্ঞান, কাঁচি হয়ে দাঁড়ালো শল্যচিকিৎসক, ঝাড়ু হয়ে দাঁড়ালো জমাদার। তাদের পিছনের সত্তাটা হল গৌণ।
        শ্রমের মান কমে এলো কৃপার নীচে। ফলে আলস্য হল সাধন, আর শ্রম হল শূদ্র। বাক্য যত সুক্ষ্ম হল পেশী হল তত দুর্বল, বুদ্ধি হল চতুরতার সমার্থক শব্দ। সমস্ত সদগুণ, ক্ষমতা, প্রেম, করুণা, সত্যপরায়ণতা হল এক ব্যক্তি - সদগুরু। 
        আলো শব্দটা লিখলে আলো জ্বলে ওঠে না, তার জন্য সাধন লাগে। সৎ আচরণ লাগে। অনুকম্পা লাগে। আত্মত্যাগ লাগে, যার গেরুয়া ব্র‍্যাণ্ডে স্বঘোষিত না হলেও চলে। কিন্তু অলৌকিক গল্প আর রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে গুরুবাদ দাঁড়ালো, তাতে গোষ্ঠী হল, দুর্বলতা এলো, ত্যাগের ছদ্মবেশে ভোগ এলো। আলো জ্বলল না।
        সংঘর্ষ হল না। দ্বন্দ্ব তৈরি হল না। তাই ব্যক্তিত্বও তৈরি হল না। যা তৈরি হল তা ছাঁচ। অনুকরণ এলো, ঝুলনের মত সাজানো রূপকথা হল, সত্য পড়ে রইল দূরে অবহেলায়। গুরু রইলেন নির্বাসিত। ছাঁচ বসল আসন পেতে। ব্যক্তিত্ব না, শিষ্য 'ব্যক্তি' চেয়ে বসেছে। দাগ বোলানো সোজা, দাগের উপর আসক্তি আনা আরো সোজা, মুশকিল হল নিজের থেকে নিখুঁত দাগ টানতে শেখা। তাই ভোগ, আরতি, উৎসব, উপঢৌকন, পাথরের মূর্তি সব হল কিন্তু একটা প্রাণের সলতেও পুড়তে রাজি হল না। ব্যক্তিত্ব অনুপ্রাণিত করে, ব্যক্তি দল বাঁধতে বলে। তাই দল হল, আলোকিত প্রাণ এলো না।