Skip to main content

বাঘের ইচ্ছা হল পিঠে খাবে। কিন্তু কি করে খাবে, সে তো পিঠে বানাতেই জানে না। গ্রামে এক ভালো শেয়ালের পরিবার ছিল। বাঘ খবর পেল তারা সংক্রান্তির দিন পিঠে বানাবে। শেয়ালের পরিবারে সে আর তার বউ শিয়াল আর তার দুই বাচ্চা শেয়াল থাকত। সত্যি সত্যিই তারা সংক্রান্তির দিন পিঠে বানাত।

      বাঘ কি করবে এখন? সে শেয়ালের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ফোন - এই সবেতে আড়ি পাতার জন্য আরো শেয়াল লাগালো। তাদের কাজই হল শেয়ালের পরিবারের সব কিছুর খবর রাখা। এমনকি তাদের বাথরুমের সঙ্গে এমন যন্ত্র ঠিক করে দিল যে পরিবারের সদস্য পিছু মল-মূত্রের হিসাব পর্যন্ত রাখা শুরু হল। তাদের জানলায়, ঘুলঘুলিতে এমন একটা যন্ত্র লাগানো হল যে তারা কতটা অক্সিজেন নেয়, কতটা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছাড়ে তারও হিসাব রাখা হতে শুরু হল। দিনে দুবেলা করে বাঘ তাদের বাড়ি অতিথি হয়ে যেত, নিজের কয়েকটা লোম তাদের উপহার দিত, আর বলত, যখনই তোমাদের কোনো দরকার হবে এই লোম দেখালেই সব কিছু দিয়ে দেওয়া হবে। মাঝে মাঝেই আদর করে বাচ্চা শেয়ালের গায়ে নিজের দাঁতের ছাপ রেখে আসত। বাচ্চাগুলো বুঝতেই পারত না বাঘ তাদের কামড়াচ্ছে না চুমু খাচ্ছে। তারা হাসতে হাসতে কাঁদত, আবার কাঁদতে কাঁদতে হাসত।

      কিন্তু এত কাজের জন্য তো অনেক লোক লাগে। কি করে এত লোকের যোগাড় হবে? বাঘ খুঁজে খুঁজে কিছু দুষ্ট শেয়ালের নাম যোগাড় করল। তাদের ঘরে পেয়াদা পাঠিয়ে বলল, শোনো তোমাদের নামে যে বিচার চলছে সে আমার জানা। তোমরা যদি আমায় এই পিঠে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও তবে আমি তোমাদের একটা হিল্লে করে দেব, জেলে পচে মরতে হবে না। আর যদি না শোনো….

      অমনি সব দুষ্ট শেয়ালের দল, যা বলবেন তাই করব জাঁহাপনা বলে পায়ে পড়ে গেল বাঘের। দুষ্টু কাজ করতে যত ভালো লাগে, শাস্তি পেতে কি আর তত ভালো লাগে। সে সেই দস্যু রত্নাকর থেকেই ভাবুন। যখন পাপের ভাগ নেওয়ার কথা এল বাবা মা বউ সব বেঁকে বসল। তখন যে না নারদমুনি রত্নাকরকে বুঝিয়ে বলল আর এসব কোরো না, তার চাইতে ভালো করে প্রভুর নাম করো। এই বলে একটা মশা মারার ধূপ জ্বেলে তাকে বসিয়ে চলে গেল। তারপর যে না সে রত্নাকর থেকে বাল্মিকী হল। উল্টো রাম জপে, মানে "মরা" জপে যদি রত্নাকর থেকে বাল্মিকী হওয়া যায়, তবে কি সোজা রাম জপলে লোকে রত্নাকর হয়ে যায়? ধুস! কি সব আজগুবি কথা। তাই হয় নাকি! কি জানি, আমি আবার অতশত জানি না। ক্ষমা চেয়ে নিলুম বাবা, আর বলব না।

      তো যে কথা হচ্ছিল, সবার ভাগ্যে তো আর নারদের মত সুবুদ্ধি দেনেওয়ালা জোটে না, এই শেয়ালগুলোর কপালেও জুটল না, সবাই ওই বাঘের কথায় ভালো শেয়ালের পরিবারটার পিছনে লেগে গেল।

      যত পৌষ সংক্রান্তি কাছে আসতে লাগল বাঘের চিন্তা তত বাড়তে লাগল, পিঠে পাব তো? সে শেয়ালের বাড়ি যাওয়া আরো বাড়িয়ে দিল। তাদের ঠিকুজিকুষ্ঠি সব নিয়ে কত ভালো ভালো কথা বলতে লাগল। কিন্তু মনে তবু ভয়, পাব তো! যদি না পাই তবে গোটা পরিবারটাকেই খেয়ে সাবাড় করে দেব, এরকম একটা পণ মনে মনে করে নিল।

      এদিকে কি হয়েছে বাবা শেয়ালের মনে একটা কেমন সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তারা বাড়িতে যা কথা বলে, এমনকি সে মনে মনে যা ভাবে তাই কেউ কেউ না কেউ বাঘের তরফ থেকে তার কাছে এনে হাজির করে। কি করে হয়? এই যেমন তার বউ বলল, তার নাকি পাশবালিশে হনুমান আঁকা দুটো ওয়াড় চাই। ওমা! পরের দিনই ডাকে তাই চলে এলো, বাক্সের গায়ে বাঘের সই। তার দুটো ছেলে বলল তারা হরিণের মাংস খেতে চায়। বাপ রে বাপ! দু দিনের মাথাতেই উঠানে দুটো বড় বড় হরিণের মৃতদেহ পাওয়া গেল। তাদের মাথায় বাঘের পায়ের ছাপ।

      শেয়াল একদিন গভীর রাতে তার বউকে নিয়ে জঙ্গলের বাইরে একটা গুহার মধ্যে গেল। বলল,

- গিন্নী তোমার মনে কিছু সন্দেহ হয়?

- হয়। বাঘের আদিখ্যেতা নিয়ে তো?

- হুম।

- বাড়াবাড়ি করছে। মতলব তো কিছু আছেই।

- আমারও তাই মনে হয়।

- পালালে হয় না?

- যাবে কোথায়?

- তোমার বাপের বাড়ি।

- সে তো অনেক দূর।

- তাই চলো।

- কবে যাবে?

- আজই রাতে। কাল বাদে পরশু সংক্রান্তি না? চলো আমরা রাস্তাতেই পিঠে বানিয়ে নেব।

      পাঠক, এর পরে গল্পটা আমি আর জানি না। তারা বেরোলো এতদূর জানি। জঙ্গলের বাইরে গেল তাও জানি। তারপর আমি আর জানি না। বাঘের খপ্পর থেকে তারা বেরোতে পারবে, না পারবে না, এ কথা এক বিধাতাই জানেন। আমি সামান্য গল্প লিখিয়ে কি আর বলি। তবু নিজের কল্পনা মিশিয়ে বলি,

      সংক্রান্তির রাতে তো বাঘ এলো। একাই এলো। বাইরে দাঁড়িয়ে বলল, খোল রে ঝনঝনাৎ কপাট আমি পিঠে খাব!... আবার বলল.. খোল রে ঝনঝনাৎ কপাট আমি পিঠে খাব!....

      কেউ দরজা খোলে না। বাঘ এক ধাক্কায় দরজা খুলে দেখে ঘরে আলো জ্বলছে, উনুনে আঁচ, কিন্তু কেউ কোথাও নেই। বাঘ রাগে, রাগে, আরো রাগে এত জোরে চীৎকার করল যে তার মুখ থেকে হৃৎপিণ্ডটা বেরিয়ে উনুনে গিয়ে পড়ল। কিন্তু পুড়ল না, এত শক্ত সেটা, বরং আগুনই নিভে গেল। অন্ধকারে বাঘ লাফাতে গিয়ে ঘরে লাগানো সব যন্ত্র জড়িয়ে শ্বাস আটকে মারা গেল।

 

আমার গল্প ফুরালো

নটে গাছটা মুড়ালো

কেন রে নটে মুড়ালি

কৃষক কেন জল দেয় না

কেন রে কৃষক জল দিস না

রাজা কেন কথা শোনে না

কেন গো রাজা কথা শোনো না

 

"আপনি যে নাম্বারটি ডায়াল করেছেন তিনি এখন উত্তর দিতে পারছেন না…. "