Skip to main content

        কড়ে আঙ্গুলের থেকেও ছোট নদী। বেশ আসছিল একটা পল্লীগীতি গাইতে গাইতে। বাধা দিল একটা পাঁচিল। না বাঁদিকে যেতে দিল, না ডানদিকে। নদীটা গর্ত খুঁড়ে নীচে যেতে গেল, ভিতটা নামছে তো নামছেই। পাঁচিলটা বাদিকের ঠোঁটের কোণে উপেক্ষার হাসি হাসল। নদীটা বলল, যাব যে! পাঁচিল বলল, না। ক্রমে কড়ে আঙ্গুলের মত নদীটা বুড়ো আঙ্গুলের মত হল। ততদিনে বছরখানেক তো হয়েছেই। নদী বলল, এবার যেতে দাও। পাঁচিল বলল, না।
        পাঁচিলটা কারা বানিয়েছে কেউ জানে না। তাদের নাকি রক্তচক্ষু। তারা নাকি সব জানে, যা কেউ জানে না, তাও জানে। যা তারা নিজেরা বিশ্বাস করে না, তাও জানে। এমন একটা গুজব আছে। নদী পাঁচিলের ওপর দেখে শালিখ। লোকে বলে, শালিখ কই? ওটা তো দাঁড়কাক। নদীটা পাঁচিলের ওপর দেখে - কেঁচো। লোকে বলে, কেঁচো কই? ওটা তো অজগর। নদীটা ওদের কথা বুঝতে পারে না।
        বছর গড়ায়। ক্রমশ বুড়ো আঙ্গুলের মত নদীটা একটা মুষ্ঠির মত হয়। পাঁচিলকে বলে, যাই? পাঁচিল বলে, না। লোকে বলে, পাঁচিলের ওপারেই নাকি সূর্যকে গর্ত খুঁড়ে রাখা আছে। চাঁদকে মাছের জালে আটকে রাখা আছে। তারাগুলোকে বস্তায়। ওরা যখন চায় তখনই নাকি ওদের আকাশে ছুঁড়ে দেয়। এভাবেই দিনরাত হয়। নদী বিশ্বাস করে না। 
        ক্রমে নদীটা একটা হাতের মত হল। নদী বলল, যাই? তার গলার স্বরটা এবার যেন একটু বদলে গেছে। পাঁচিলের ওপরে বসা দাঁড়কাকটা(নদী যা দেখে শালিখ) টেরিয়ে তাকাল। পাঁচিল বলল, না। 
        বছর গেল। লোকে বলল, পাঁচিলটা নাকি ন'টা গ্রহ ছেয়ে ফেলেছে। কেউ বলল, উত্তর মেরু - দক্ষিণ মেরুতে যে বরফগুলো গলছে এই পাঁচিলে সব আটকে যাবে। নদী তা-ও বিশ্বাস করল না। ততদিনে সে একটা মানুষের মত হয়ে গেছে। তার জলের আঘাতে কয়েকটা ইটে অল্প অল্প ক্ষয় শুরু হয়েছে। পাঁচিল বলল,"বেইমান, দ্রোহী! এতদিন ধরে সুরক্ষা দেওয়ার এই পরিণাম!"
        বলতে বলতে জলের ওপর ঢেউ উঠল। নদীটা একটা মানুষ থেকে দুটো মানুষ, দুটো মানুষ থেকে একশোটা মানুষের মত বড় হল। পাঁচিলটার ভিতটা শুদ্ধ উপড়ে বেরিয়ে গেল। শালিখটা উড়ে পালাল। কেঁচোটা ভেসে গেল। 
        কয়েক বছর পর লোকে বলল, ময়াল সাপের মত একটা নদী আছে। যে নদীটার জল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের তারা গলে যাওয়া সরোবর থেকে আসছে। তার তলার পাথরগুলো সোনার জলে বাঁধানো। সে জলের মধ্যে কয়েক লক্ষ মৎসকন্যা। এই নদীর শাসনেই সুদিন।