একটা গ্রুপের অ্যাডমিন হওয়ার দায়িত্ব অনেক। কোনো গ্রুপের মান আমার মনে হয় না তার সদস্য সংখ্যার পরিমাণ নির্ধারণ করে। কোনো গ্রুপের মান নির্ভর করে তাদের প্রগতিশীল, কুসংস্ককারমুক্ত, উদারনীতির পৃষ্ঠপোষকতায়। আর এই কাজের দায় অবশ্যই সাহিত্যের সব চাইতে বেশি। কারণ আজ অবধি অচলায়তনের বিরুদ্ধে যদি কেউ নিঃস্বার্থ গর্জে থাকে তবে তা সাহিত্য। বাকিরা তো একটা অচলায়তনকে সরিয়ে আরেকটা এনেছে। কেন বলছি?
আমার গ্রুপে লেখা পোস্ট করা নিয়ে খুব সঙ্কোচ। এক, আমার থেকে বহুলাংশে বহু মানুষ বহু ভালো লেখেন। সেখানে নিজের পরিসরের বাইরে যেতে আমার প্রভূত লজ্জা। দুই, কোনো গ্রুপের সদস্য হতে যে পরিমাণ সক্রিয় থাকা উচিত সেই সময়টা আমি দিতে একান্ত অপারগ যে সময়ের অভাবে! সুমন সে কথা শোনে কই। তার ধারণা আমি বেশ ভালো লেখক। যত বোঝাই সে মানে না। তো হল কি সে একটা অত্যন্ত জনপ্রিয় গ্রুপে আমার 'শোধন' গল্পটা দিল। আমার টাইমলাইনে একজন লেখাটা নিয়ে ধর্মীয় বিতণ্ডা বাধান। ব্লক করি। তিনি সেই গ্রুপে হাজির হয়ে বলেন, আমার "পার্ভার্ট" রুচির ফসল এই লেখা… ইত্যাদি আরো কুরুচিকর কথা লেখেন। সেই গ্রুপের অ্যাডমিন তার প্রথম একটা কমেন্টস ডিলিট করেন, পরেরগুলো ডিলিট না করে কমেন্টস অপশানটাই অফ করে দেন। আমি সুমনকে বলি, লেখাটা তুলে নে বাপ আমার। সে তুলে নেয়। ওকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
আমার ভয়টা অন্য জায়গায়, শেষে সাহিত্যও যদি কুসংস্কারে বিরুদ্ধে ভাষা হারাবে, অত্যচারের বিরুদ্ধে নীরব থাকবে তবে দাঁড়াই কোথায়।
সারা দেশে একটা ধর্ষণ হলেও চীৎকার করব। দেশের অধিকাংশ মেয়েই তো ধর্ষিতা নয় - এই সংখ্যাতত্ত্বের মাধুর্যে নিদ্রা যেতে লজ্জা বোধ করে। সমাজের সাথে একাত্ম বোধ করার শিক্ষা সাহিত্য দেয়, নইলে নিজের মনের অন্ধকারে নিজের একাকীত্বের দায় নিজেই বহন করতে হয়, আর 'কিছুই হল না' বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়।
আমি সংখ্যার ধার ধারি না, মানেরও না। আমি এমন কিছু হনু লেখক নই যে আমার লেখা না পড়লে সংসারে বড়সড় কিছু ক্ষতি হয়ে যাবে। নীতির দুর্বলতা সহ্য হয় না। চালাকি অসহ্য লাগে। আমি কাউকে তুষ্ট করার জন্য লিখি না, নিজেকে অমরত্বে বসাবো বলেও লিখি না, যে কারণে একজন মানুষের সাথে কথা বলি সেই কারণেই লিখি, তাতে কার সুক্ষ্ম ধম্মবোধে কি আঘাত লাগল ভেবে কলম চালানোর মত সুক্ষ্ম নিব আমার কলমে নেই। চারদিকে ভালো করে বুক আর চোখ বুলিয়ে তাকালে তা রাখাও দুষ্কর। আমি সেই সব গ্রুপ, বন্ধু এই মুহূর্তে ত্যাগ করতে রাজি যাদের চোখটা পুরো খুলতে সংস্কারের পিচুটিতে আটকে যায় কিম্বা সেই সব হুঙ্কার ছাড়া সিংহের ছাল পরিহিত শার্দুলদের ভয় পায়।
সৌরভ ভট্টাচার্য
3 July 2018