ঘুম থেকে উঠে রোজ গ্রীলের পাশে আসেন।
ভোরের আকাশ তখন সূর্যোদয়ের অভ্যর্থনায় ব্যস্ত।
তিনি মনে মনে বলেন, আমিও আছি।
বেলায় রান্না হয়ে গেলে,
অসুস্থ স্বামীর মাথা ধুইয়ে আরেকবার গ্রীলের পাশে আসেন।
চারিদিকে কত ব্যস্ততা-
স্কুলে যাওয়া কচিকাঁচার দল
অফিসে যাওয়া উর্দ্ধশ্বাস ছোটাছুটি
তাঁর ভাঁজ পড়া গালে স্মিত হাসির রেখা টানে,
অস্ফুটে বলেন, আমিও আছি।
দুপুরে স্বামীকে খাইয়ে
নিজে খেয়ে গ্রীলের ধারে বসেন।
শান্ত পুকুরের পাড়, মাঝে মাঝে সাইকেল, রিকশার অলস আসা যাওয়া,
বাঁদিকে, ফ্ল্যাটের ধারে কৃষ্ণচূড়া গাছ,
তাতে ক্লান্ত কটা কাক-
তাঁর দুপুরবেলার সাথী।
সবার সাথে তিনিও আছেন, জানেন।
আবার আসেন গ্রীলের ধারে রাতের দিকে।
এদিক ওদিক আলো জ্বালা সব জানলা
তার মধ্যে হাঁটা, বসা, শোয়া মানুষের অবয়ব
ছোট ছোট কত গল্প হাওয়ায় মিশে
কালের স্রোতে ছুটছে।
তাঁরও কিছু গল্প আছে,
মাথাটা এলিয়ে দেন গ্রীলের লোহার কাছে।
বাতাস তাঁর মাথার কটা চুল উড়িয়ে মেলে বাইরে
তিনি হাত মেলে দেন সামনে, লোহার ফাঁক দিয়ে
রাতের অন্ধকার এসে ছোঁয় তার শীর্ণ দুটো হাত, সাদা শাঁখা উজ্বল হয়ে জ্বলে।
তাঁর গায়ের গন্ধ আর ঘরের গন্ধের সাথে,
বাতাস আনে কি ফুলের এক গন্ধ-
কোথায় ফুটে?
বাইরে যাবেন,
ছেলে ফিরুক বিদেশ বিভুঁই থেকে।
হুইল চেয়ারের চাকায় দেন হাত
ঘরে ফেরেন, পিছনে গ্রীল রেখে,
অস্ফুটে স্বামীকে বলেন-
"আমি আসছি, আমি আছি",
পিছনে যান, সারাটা রাত রেখে।