আমি কথায় কথায় মাঝে মাঝে বলে থাকি, পাঁচ বছর অন্তর অন্তর অন্তত 'গোরা' বইটাতে একবার ঘুরে আসা দরকার। কিন্তু পাঁচ বছর বয়সে ঘুরে আসা দরকার জম্মেও বলিনি! তা ইনি বাপকে পড়তে দেখে নিজেও চোখ বুলিয়ে দেখতে চাইছেন এতে সারবস্তু আদৌ কিছু আছে কিনা....কিম্বা কোনো ছবি ছাড়া মানুষ এমন পাতার পর পাতা শুধু কালো কালো অক্ষরে কী পায়?
ছবিটা দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, ও যখন বড় হবে, আদৌ কী বাংলা ভাষায় এই বইটা ছাপা হবে? কিম্বা আদৌ কী ওর বাংলা ভাষার অযুত-নিযুত সম্পদ সম্বন্ধে কোনো ধারণা বা আগ্রহ থাকবে? ওর যখন এ বই পড়ে বোঝার বয়েস হবে, পড়বে তখন এ বই? জানি না। আজকের তরুণ প্রজন্মের কজন 'গোরা' বা 'ছিন্নপত্র' পড়েছেন? চারদিকে যা দেখছি তাতে নিয়ে আশাপ্রদ কিছু দেখছি না।
কিন্তু সে ভাবনা থাক। রবি ঠাকুর যদি এ ছবি ওঁর নিজের ফেসবুকের পাতায় আজ দেখতেন, নিশ্চয়ই রাজার চিঠির মত একখানা 'শিশু ভোলানাথ' কি দুটো ছড়া লিখে পাঠাতেন। আমরা তো সবাই এক অর্থে অমল। ঘরবন্দী। অসুস্থ। শুধু সরলতাটুকু যা হারিয়ে ফেলছি অমলের। তাই রাজার চিঠি আর ফকিরের উপর যে আমার প্রাকজন্ম অধিকার সেও ভুলে যাচ্ছি। যত ভুলে যাচ্ছি তত পুড়ে যাচ্ছি। ছাই হচ্ছি শুধু। সোনা হচ্ছি না। খাঁটি হচ্ছি না। আমাদের আর আছেটা কী? আমাদের ফকিরও রবীন্দ্রনাথ, রাজাও রবীন্দ্রনাথ।
এই পুচকেটি বড় হয়ে যদি শান্তিনিকেতনের সে চিরতরুণ বৃদ্ধ গাছটির তলায় বসার ভাগ্য পায়, আর চিন্তা থাকে না। সে আরাম যে জানে সে জানে। এটুকুই প্রার্থনা, রবীন্দ্রধনে ধনী হোস বাপ আমার!