Skip to main content

একভ্যান গোপাল মূর্তি কেন এল দিদি? আপনারা তো পুজোপাঠের ধার ধারতেন না এদ্দিন?

আর বলবেন না…. আমার বড় মেয়েটা এই এমএসসি পাস করে বসে আছে তো…. চাকরি-বাকরির যা বাজার….. গানটান গেয়ে কত রিল বানালো…. চলল না দিদিভাই….. তাই এখন বলছে গোপাল নিয়ে রিল বানাবে। এই কালকেই বেলঘরিয়া-কৃষ্ণনগর মান্থলি কেটে আনল। পাড়ার খোকন আছে না…. আরে মৈত্রদের ছোটো ছেলে, ও দু'হাজার করে নেবে, সপ্তাহে চারটে করে রিল বানিয়ে দেবে বলেছে। মেয়েটা রোজ ট্রেনে চড়ে যাবে… গাইবে... নাচবে…. রাস্তায়, ট্রেনে… সব ভিডিও হবে… আইফোন আছে না ওদের…..

এটা ভালো বলেছেন… আজকাল দেখি তো…. কি সুন্দর গোপাল নিয়ে… কি বড় বড় গোপাল দিদিভাই… কি সুন্দর যে কি বলব…. আমারই ইচ্ছা করে কোলে নিই….. সে কত খাওয়ানো… খেলনা কিনে দেওয়া…. কি আদর… সব দেখা যায় আজকাল….. আমার আমাদের গুরুদেবের কথা মনে পড়ে কি কান্না পায় জানেন…. একটা কুটিরে সাধনভজন করে কাটিয়ে দিলেন…. আজকালের দিন হলে ওঁর সাধনভজনের লাইভ হত দিদিভাই….. বা ভাবুন… রামকৃষ্ণদেব… বামাক্ষ্যাপা মাকে খাওয়াচ্ছেন… লাইভ ভিডিও করে দিচ্ছে মথুর… কি হৃদে…. কি দারুণ হত না দিদিভাই?

কি জানি ভাই…. আমার মায়ের আবার গোঁসা। আসলে আমাদের বাড়িতে তো ছোটো গোপাল দেখেই বড় হয়েছি। মা সব শুনে বললেন, তা রাস্তায় রাস্তায় গোপাল নিয়ে ঘোরাই বা কেন…. আর সেসব ভিডিও করে পাঁচ পাব্লিককে দেখানোই বা কেন…. এ তো কোনো পার্ফরমিং আর্ট নয়…. ভক্তি তো মা নিজের মনের জিনিস…..

তা কেন বলছেন দিদিভাই… মহাপ্রভু তো রাস্তায় কীর্তন করেছিলেন…. স্বয়ং জগন্নাথদেব রাস্তায় বেরোন… আর মানুষ তার গোপাল নিয়ে রাস্তায় বেরোতে পারবে না?

ঠিক… এই এক কথাই আমিও মাকে বললুম… তা মা এমন ঝাঁঝিয়ে উঠলেন…বললেন, মুড়িমিছরি একদর করিস না পুটু…. কোথায় মহাপ্রভু আর কোথায়….. আত্মপ্রচার আর আদিখ্যেতার মধ্যে পার্থক্য নেই?... আমি বকা খেয়ে চলে এলুম….

লোকে বলবেই, সেসব কথায় কান দেওয়ার দরকার নেই দিদিভাই…. তবে দেখবেন নাম হয়ে গেলে আমাদের আবার না চেনার ভান করবেন না যেন…. আজকাল দেখি বাড়ির সব আনাচকানাচ দেখিয়ে… রোজকার রাঁধাবাড়া.. কাচাকুচি… ফষ্টিনষ্টি লাইভ করে কি বড় বড় বাড়ি বানিয়ে ফেলছে দিদিভাই… আমার উনিও মাঝে মাঝে বলেন… আমার আবার ভীষণ লজ্জা লাগে দিদিভাই… সেই নিয়ে উনি কি গোঁসা করেন…. তাই বলছিলাম… নামটাম হলে আমাদের আবার ভুলে যাবেন না দিদিভাই।

======

মাস ছয়েক হল। গোপাল বাড়ির সামনে এখন প্রায়ই লাইন লাগে। সব ভ্লগাররা আসেন। অনেকে সেল্ফি নিতে আসেন। কিন্তু বাড়ির মালকিন মাঝে মাঝে কষ্ট পান… মনের দুঃখ পাশের বাড়ির লাজুক দিদির কাছে বলেন… জীবনটা নিরামিষ খেয়েই কাটবে দিদিভাই এখন থেকে… এই যা কষ্ট… বাকি তো যা চলছে চলছেই… ঠিকই আছে… কিন্তু মেয়েটা বিয়ে করবে না বলছে জানেন…. এইবার আমার ভয় লাগতে শুরু করেছে…. আপনি সত্যজিৎ রায়ের 'দেবী' সিনেমাটা দেখেছিলেন তো… আরে সেই শর্মিলা গো… ছবি বিশ্বাস শ্বশুর…. শেষে কেমন পাগল হয়ে গেল… ও দিদি… দিদি গো…. আমার মেয়েটাও শেষে….

আহা… কাঁদেন কেন…. কাঁদবেন না….. আপনার মা কি বলছেন…. উনি তো বেশ মানুষ….

মা তো আমাদের সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছেন একরকম দিদিভাই। বুবুন কি দামী একটা শাড়ি কিনে মাকে দিতে গিয়েছিল। মা নেয়নি জানেন। আচ্ছা বলুন, আমার মেয়েটা সুখ পাচ্ছে বলেই যে না করছে… আর আমার মেয়ে কত মানুষকে যে ভক্তিপথে আনছে আপনি কমেন্টস দেখলে জানতেন দিদিভাই….

আহা, তা আর জানি না দিদিভাই…. আগের দিন ওই যে দুটো বড় বড় টেডিবিয়ার নিয়ে গোপাল ভোলানো ভিডিওতে আমি একশো আটবার জয় রাধে কৃষ্ণ লিখলাম না? আপনি দেখেননি….

আসলে এত এত কমেন্টস না দিদিভাই….

সে তো বটেই… সে তো বটেই….

আজ আসি দিদিভাই…. কাল আবার আমরা বৃন্দাবন যাচ্ছি দিদিভাই। আমি বুবুন আর খোকন। লাইভ হবে, আরো অনেক কিছু হবে…. মেয়েটা যা সব সুন্দর সুন্দর ড্রেস কিনেছে না দিদিভাই….

হ্যাঁ দিদি… খচ্চাও আছে…. আমাদের খড়গ্রামের এক আত্মীয়ের ছোটোছেলেও শুরু করেছে। আলাদা করে ডাইনিংরুম বানিয়েছে। সেখানে ছ'টা চেয়ারে ছ'টা গোপাল বসে দিদিভাই… না না, দুটোতে রাধা… বাচ্চা রাধাই… আর কতরকমের আইটেম…. সব নিরামিষ দিদিভাই…. আমার ভক্তিতে চোখে জল আর স্বাদগ্রহণের জন্য জিভে জল একসঙ্গেই আসে দিদিভাই…. কি ভাগ্য আপনাদের সবার… আমার আর হল না…. আমার ছেলেটা সেই এক চাকরি আর বাড়ি…..

পূর্বজন্মে অনেক সুকৃতি না থাকলে হয় না দিদিভাই…. আজ আসি… অনেক গোছগাছ আছে…. এখন তো আর আগের মত যেমন তেমন গেলেই হয় না…. আমাদের দিয়ে গোপাল যখন লোকশিক্ষা দেওয়াচ্ছেনই… কাকে দিয়ে যে কখন কি করান…. এই তো কত লোকে জ্ঞান দেয়... এর থেকে তো একজন অনাথ বাচ্চার দায়িত্ব নিতে পারেন.... কি কথা দিদি... আমরা কি খেশ্চান... ওসব মাদার টেরেসা হওয়া আমাদের ধম্মে আছে?.... সেবার বৃন্দাবনে দেখেছিলাম.... কি বড়লোক সব... ইয়াব্বড় গাড়ি থেকে নামল... সঙ্গে পেরাম্বুলেটার... তাতে কি চমৎকার গোপাল.... লোকে এটা সেটা কিনে দিচ্ছে.... আমি এক গরীব বাচ্চা... নাক দিয়ে শিকনি পড়ছে.... তাকে ওরকম নিয়ে যেতে পারব?.... যতসব আদিখ্যেতা দিদিভাই.... আসি বুঝলেন...

======

এই প্রমিলা…. আমি রিতপাদি বলছি রে… আরে ওই গোপাল বাড়ির পাশেই…. হ্যাঁ হ্যাঁ…. আমার মনে হয় মেয়েটার মাথাটা পুরো গেছে…. সঙ্গে বাড়ির লোকগুলোরও…. আরে হ্যাঁ… এই তো ওর মা এসেছিল….. আরে না না…. শুরুতে এরকম ছিল না…. আরে ধুর….. না না…. আরে আমি জানি না….. তবে কি জানিস আজকাল ভয়ও লাগে…. কিসব তুকতাক তো করতেই পারে বল…. ওদের বাড়ি থেকে প্রসাদ দিলে আমি খাই না… বাড়ির কাউকেও দিই না খেতে…. আরে…. না না…. আসল না লোকদেখানি বুঝিস না?.... তুইও দেখছি কম ন্যাকা নোস বাপু….. আরে আসল জিনিস অমন বাজারি করে ছাড়ে কেউ?….. হয় তো হবে…. জানি না…. আমার তো অত বুদ্ধিশুদ্ধি নেই বাবা…. আচ্ছা রাখছি…..

======

"এখানে সুদর্শন গোপাল মূর্তি তৈরি হয়। রিল বানাতে বানাতে রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে রঙ চটে গেলে আমরা প্রথম চারবার কোনো টাকা নিই না। যে কোনো সাইজের গোপাল পাওয়া যায়।"... ঠিক আছে দাদা?

হ্যাঁ, তুই একটা বিজনেস অ্যাকাউন্ট খুলে ফেল ফেসবুকে… আমি প্রথমে দশ হাজার মত ছাপাতে দিই। সব দিক থেকেই প্রচার হোক। আর শোন, কণ্ঠি অর্ডার দিয়েছিস? আজ থেকে পোশাক আশাক বদলাতে হবে।

দাদা ফোন….

হ্যালো…. হ্যাঁ বানাই… কটা লাগবে? বারোটা…. কি কি সাইজ….. আচ্ছা চল্লিশ ইঞ্চি…. বত্রিশ ইঞ্চি…. বলছিলাম…ক্যামেরাম্যান লাগবে?... আছে… ভালো….. গানের গলা? সে তো জানি না…. আচ্ছা খোঁজ নিয়ে নেব…..

======

অ্যাই রিতপা বৌদি বলছি…. ওদের বাড়ির লোকেরা কবে আসবে রে?... ও…. টগর ঝাঁট দিতে ঢোকে না….. আমার সঙ্গে একবার দেখা করতে বলিস তো……

======

টগর….. এক হাজার টাকা দেব…. ও বাড়ির ঠাকুরঘর থেকে যা হোক…. বাসি ফুল… ছেঁড়া কাপড়… যা হোক এনে দেবে তো…. আমার ছেলেটার প্রোমোশনটা হতে হতেও হচ্ছে না…. দেখি ওর হাতে যদি একটা….. ওদের দোতলায় এখন চারটে এসি না?.... ছ'টা?!.... ঠাকুরঘরেই চারটে! বাপ রে!.... নিয়ে এসো কিন্তু….. অবশ্যই…..

======

আচ্ছা স্যার….

না বলে ঘরে ঢুকলে কেন?

স্যার বলছিলাম কি… একটা আইডিয়া এসেছে…. বলি?

এসে যখন পড়েইছো… বলেই ফেলো….

স্যার বলছিলাম….. সুপারপাওয়ার রোম্যান্টিক ইলিউশন অ্যাণ্ড ইগো ডিসর্ডার নিয়ে একটা পেপার করব স্যার?.... মানে এটা কি কোনো কমপ্লেক্স না ম্যানিয়া স্যার?.....

বড়কর্তার সঙ্গে কথা বলে জানাতে হবে। ফাণ্ডের ব্যাপার আছে তো একটা…. উনি হাত দেখাতে গেছেন স্বামী প্লুটোবিকাশনন্দের কাছে…. দশ মাস পরে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছেন…. আজ ফিরলে মুড ভালো থাকলে জানাব…. তুমি তোমার টেবিলে যাও…. এরা একাদশীর দিন কেন যে ডিমসেদ্ধ দেয় বুঝি না….