সৌরভ ভট্টাচার্য
28 May 2019
ঘুড়িটা নিঃশব্দে মেঘের মধ্যে দাঁড়িয়েছিল। বাতাস বলল, দাঁড়িয়ে থাকো। আমি মেঘেদের পার করে নিই।
একটা মেঘ উড়ে যেতে যেতে বলল, তোমায় আবার কে নামাবে?
ঘুড়ি বলল, সুতো। লাটাই বাঁধা, হাতে ধরা। তারপর সে মেঘকে বলল, তোমায়?
মেঘ বলল, জলের টান, মাটি ডাকলে।
ঘুড়ি রাতের বেলায় জানলার পাশে দেওয়ালে ঝুলতে ঝুলতে শুনল বৃষ্টি হচ্ছে। সে ফিসফিস করে বলল, কখন নামলে?
ভিজে বাতাস বলল, প্রথম প্রহরে। তুমি আটকে কেন? উড়বে? বাইরে যাবে আমার সাথে?
ঘুড়ি বলল, না ভাই, ভিজলে আমার মরণ, শুধু কঙ্কাল থাকবে বুক চিতিয়ে।
ভেজা বাতাস বলল, বেশ।
বৃষ্টি থামল। পরেরদিন মেঘমুক্ত আকাশ। ঘুড়ি উড়ছে একা। সুতোর টানে পাঁজরে ব্যথা। নীচে তাকিয়ে দেখল গতকালের বৃষ্টিতে খালবিল মাঠঘাট সব ভরা। ঘুড়ি সুতোকে বলল, আমিও ভিজব বর্ষার মেঘে, উপরে চলো আরো।
সুতো বলল, না। লাটাই বলল, না। হাত বলল, না। চোখ বলল, খবরদার!
রাতে ঘুম হল না। বর্ষার জলে ব্যাঙ ডাকছে। ঝিঁঝি ডাকছে। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় দরজা গেল খুলে। তাকে উড়িয়ে নিয়ে উঠোনে করল বার। মেঘ উঠল গর্জিয়ে। বিদ্যুৎ উঠল চমকিয়ে। বাতাস নিল তাকে উড়িয়ে।
মেঘ ভেজালো। বড় দীঘিতে গিয়ে পড়ে ঘুড়ি হারালো প্রাণ।
বর্ষা গেল। চারদিক বন্যা থইথই। শরতের মেঘ দেখল একটা পিঁপড়ের পরিবার ঘুড়ির কাঠির বুকে চেপে হচ্ছে পথঘাট পার।
ঘুড়ির কাঠি, শরতের মেঘকে বলল, "তুমি বর্ষার মেঘকে বোলো, আমি মরেছি। হারাইনি। সুতোর হ্যাঁচকা টানের যন্ত্রণা ছাড়িয়ে ভাসছি জগত স্রোতের টানে। আমি তার অপেক্ষায় আছি। মহাসাগরে পাড়ি দেব বলে, এদের করে নিই পার!"।