অনেক রাত। নতুন বাড়িতে এমনিই আমার ঘুম আসে না। জানলার কাছে এসে দাঁড়ালাম। ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে পাশের বাড়ির জানলা। বাচ্চাটা এখনও ঘুমায়নি। দুদিন হল এ বাড়ি এসেছি। রোজই দেখি সন্ধ্যে হলেই বাচ্চাটা ওর ঘরে জানলার উপর বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাকায়, কিন্তু কথা বলে না। ওই বাড়িটা নাকি এক অধ্যাপকের। স্বামী স্ত্রী দুজনেই অধ্যাপনা করেন।
এখনও বাচ্চাটা জানলায় বসে। আমারও ঘুম আসছে না। বাচ্চাটাকে ডাকলাম। তাকালো। কথা বলল না। খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ল। সেও আবার এ পাশ ফিরেও না। ওদিক ফিরে।
প্রায়ই এরকম হয়। আমি একদিন আমার দিদিকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোর সঙ্গে কথা বলে?
দিদি বলল, খুব একটা না, টুকটাক। একদিন দুপুরে ওর আঁকা ছবিগুলো জানলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখিয়েছে। দারুণ আঁকার হাত রে! ব্যস, ওইটুকুই।
কিন্তু আমার সঙ্গে কথা বলে না। কোন ক্লাসে পড়ে ছেলেটা?
দিদি বলল, থ্রিতে। ওর নাম প্রতুল। ডাক নাম বুকাই।
বাবা! এত কথা?
আমি একদিন সন্ধ্যেবেলা জানলার ধারে দাঁড়িয়ে। প্রতুল জানলায় বসে। প্লেন যাচ্ছে, দেখছে। আমি ডাকলাম, এই প্রতুল…প্রতুল….
শুনল না। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল শুধু। হঠাৎ আমার পিছনে এসে দিদি দাঁড়ালো। বলল, কার সঙ্গে কথা বলছিস?
আমি জানলা দেখিয়ে বললাম, কেন প্রতুল… ওই দেখ জানলায় দাঁড়িয়ে…
দিদি বলল, চোখের মাথা খেয়েছিস… এই তো আমার সঙ্গে ওর আঁকার খাতাটা নিয়ে এসেছে… ওই তো….
আমার খাটের উপর বসে প্রতুল। আমি আবার জানলার দিকে তাকালাম, আমার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে প্রতুল ওর ঘরের জানলায় বসে। আমি আবার খাটের দিকে তাকালাম। এই তো বসে! তবে?
আমার মাথা ঘুরছে। বমি পাচ্ছে। আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না। তবু জোর জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার কি কোনো ভাই আছে প্রতুল..
প্রতুল বলল, ছিল, ঘুড়ি পাড়তে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে… বিপুল…. আমরা যমজ ছিলাম…
আমি আবার জানলার দিকে তাকালাম। চমকে উঠলাম। বিপুল আমার জানলার রড ধরে দাঁড়িয়ে, আমার দিকে তাকিয়ে নীচের দিকে তাকাচ্ছে, বলছে ঘুড়ি… ঘুড়ি… ঘুড়ি….