খোলা চোখে তাকাও। ভাবনা আঁধারে ঢাকো কেন মন?
চাচা বললেন, আসি, নামাজের সময় হল।
চাচা ঘর বাঁধে। সেই পেশা। বয়েস অনেক। "বলতি পারো সত্তুরের উপরে"।
চাচা চলে যাচ্ছেন। নামাজের সময় হল। আমার ঠাকুমার কথা মনে পড়ল। সালকিয়ার ঘিঞ্জি গলির মধ্যে ছাদে দাঁড়িয়ে ঠাকুমা। জীবনের অর্ধেক ওদেশে। বাকিটা এদেশে। সন্ধ্যে হচ্ছে। ঠাকুমা বললেন, নীচে নামি, সন্ধ্যে দিতে হবে।
ঠাকুমা সিংহাসনের সামনে বসে। চোখ বন্ধ। বুকের কাছে ডান হাত, জপ চলছে। কাকে খোঁজো, ডাকো ঠাকুমা? কাকে ডাকো চাচা?
আমি খোলা মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে। কাকে ডাকার আছে মন? কাকে খোঁজার আছে?
"তুমি যে চেয়ে আছ আকাশ ভরে, নিশিদিন অনিমেষে দেখছ মোরে"....
মাইকে ভেসে এলো ডাক....আল্লা হো আকবর....
হঠাৎ কানে এলো এক নারী কণ্ঠের উদ্বেগ। "হাঁস ফেরেনি গো ঘরে".....
সে দৌড়াতে দৌড়াতে বলছে। মাঠের মধ্যে খালি পায়ে। আর বলছে, "আজও আমি নামাজ পাব না গো...আজান হয়ে গেল...."
ওদিকে হাঁস ফেরেনি। এদিকে নামাজের সময় চলে যাচ্ছে। ঘরের মানুষ ঘরে না ফিরলে মন বসে? মানুষ মানে কি শুধু মানুষ?
ঠাকুমার মুখে শুনেছি, গরু না ফিরলে মাঠে মাঠে ঘুরে খুঁজতে হত....
তখন তোমার জপের কি হত ঠাকুমা?
আর জপ! তিনি অপেক্ষা করবেন। কিন্তু আমি না গেলে গরুটা ফিরবে না....
ঘরে ফেরার তো আমারও আছে মন...... আমাকেও কি কেউ ডাকছে?
ঠাকুমা বলছে, ডাকছে, ডাকছে। চাচা বলছে, ডাকছে, ডাকছে। সে ডাক শুনবে বলেই তো আসা। সবই নইলে কোলাহল। নইলে এত ক্ষোভ, এত উষ্মা শান্ত হয় কোন ডাকে গো...... খোঁজো মন খোঁজো....