Skip to main content

তবে কি এখনই বেরোবে? বাইরে যে বৃষ্টি, যাবে?

এগোই বুঝলে, ওরাও অনেকক্ষণ ধরে সাজিয়ে গুছিয়ে অপেক্ষা করছে, আর বেশিক্ষণ থাকলে বাজে দেখায় যে!

আমি?

তুমি এসো না। চৌকাঠ অবধি এসো। যেমন আসতে আমার বাপের বাড়ি যাওয়ার সময়। "টাটা" করে ঢুকে পড়তে। তখন তোমার চেম্বার ভর্তি রুগী। কিন্তু আমার তো সেই ন'টা তিরিশের বাসটা না ধরতে পারলে ট্রেন পেতাম না বলো… তোমার বিবশ চোখ দুটো দেখতে যে কি মায়া হত! মনে হত আরেকটা বেলা তোমার ভাত বেড়ে দিয়ে এলেই হত!

জানি। বুঝতাম। তাই তুমি মোড় ঘোরার আগেই ঢুকে পড়তাম। তুমি মোড়ে অদৃশ্য হওয়ার আগে।

জানি। আসি বুঝলে।

 

======

 

চলে গেল। ঘরে চন্দন, ফুল আর ধূপের গন্ধ। চেম্বারের দরজা খুলে ঢুকলেন। একজন একজন রুগী আসতে শুরু করল। এ গ্রামে তিনি ছাড়া ডাক্তার নেই আর।

একজন রুগী বলল, ভালোই হল, ভীষণ ভুগছিলেন।

আরেকজন বলল, আজকে না খুললেই পারতে চেম্বার।

কেউ কাঁদল। কেউ সান্ত্বনা দিল। কেউ কিছুই বলল না।

 

=====

 

সবাই ফিরল অনেক রাতে। ভিড় ছিল। লোহা আর আগুন ছুঁয়ে স্নানে গেল সবাই একে একে।

তিনি চেম্বার বন্ধ করে ঘরে এসে বসলেন। অনেক রাত।

পাশের ফাঁকা বালিশের নীচে হাত ঘড়িটা রেখে বললেন, সকাল হলে জাগিয়ে দিও আমায়। না ডেকে। শুধু ছুঁলেই হবে। আমি জেগে যাব।

বাকি জীবনটা প্রতিদিন সকালে উঠেছেন। পাশের বালিশে লেগে থাকা সিঁদুর লাগা সাদা চুল খুঁজেছেন। হাতমুখ ধুয়ে এসে হাত ঘড়িটা ডান হাতে পরতে পরতে বলেছেন, হেঁটে আসি।

একদিন ভোরে আর উঠলেন না। পাশের বালিশের নীচে ঘড়ির কাঁটা তিনটেও থেমে। লোকে বলল, কি সমাপতন!

চৌকাঠ পেরোনোর সময় তিনি বললেন, আসছি।

ধূপ, ফুল আর চন্দনের গন্ধ মেখে ঘরের দেওয়ালে লেগে থাকা কয়েক বছর আগের স্মৃতি বলল, এসো।

দেওয়ালগুলোকে ছাদসমেত রেখে ঘর এলো পিছু পিছু। তিনি বললেন, তুমি এলে যে?

ঘর বলল, স্মৃতির আলপনা ছাড়া ঘর হয় বুঝি?