পুরীর সমুদ্রতট। গ্রীষ্মকাল। সার দিয়ে লাল, নীল চেয়ার পাতা। পিছনে চায়ের দোকান। চা খেলে যতক্ষণ ইচ্ছা বসে গল্প করতে পারবেন।
বারো-চোদ্দো বঙ্গবাসী, মধ্যবয়সী, নারী-পুরুষ নির্বিশেষ গল্প করছেন। আমি চরিত্রদের পরিচয় আর দিলাম না। আমাদের চেনা সবাই।
-- মাছ খাবেন না দিদি এত রাতে, গতকাল রাতে এমন পেটে জ্বালা ধরেছিল যে কি বলব! শেষে দুই ছিপি ডাইজিন, একটা প্যান-ডি, দুটো অ্যাসিলক খেয়ে কমল।
-- গ্যাস বড় বাজে জিনিস দিদি, আমার শাশুড়ি, ভালো মানুষ, খেয়েদেয়ে বসে গল্প করছিলেন, হঠাৎ ওনার হাতের বুড়ো আঙুলের ডগাটা চিনচিন করে দু’বার ব্যথা হল (সবার দৃষ্টি বক্তার বুড়ো আঙুলের দিকে), কানের লতিতে একটা মোচড় – ব্যস, সব শেষ।
-- আমার মেজদারও তো তাই হল... কিচ্ছু না, একটু অম্বল, সকাল থেকে বলছে বুকে ব্যথা, বুকে ব্যথা, পাত্তাই দিল না... শেষে...
-- মারা গেলেন? আহা কত বয়েস হয়েছিল, আপনারই তো এত অল্প বয়েস...
-- আহা মারা যাবেন কেন... মারা যান নি, প্যারালাইসিস... গ্যাস পিঠে উঠে ঘাড় দিয়ে গিয়ে মাথায় উঠে মাথার রক্ত চলাচলটা বন্ধ করে দিল... ব্যস...
-- আহা (সমস্বরে)
-- গ্যাস বড় বাজে জিনিস দাদা, আমার হাঁটু কি পায়ের গোড়ালি টনটন করলেই বুঝি, ব্যস, গ্যাস...
-- সত্যিই তাই...
-- মানুষের কখন যে কি হয়, আমার মেশো, ভালো মানুষ, হঠাৎ হাঁটুতে ব্যথা, এখানে ওখানে কত ডাক্তার দেখালাম... কিচ্ছু হল না, শেষে ভেলোর গেলাম... ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকে বসিনি অবধি... ডাক্তার হেসে বললেন, কাশি হয়? আমরা তো তাজ্জব! বললাম, বিলক্ষণ হয়। ডাক্তার আবার একটা তামিল হাসি হেসে বললেন, লোয়ার নিউমোনিয়া।
-- নিউমোনিয়া?!! (সমস্বরে)
-- আর বলবেন না, আমরাও তো তাজ্জব, নিউমোনিয়া তো হৃৎপিণ্ডে সর্দি জমে হয়...
-- না দিদি, শুধু তাই নয়, ফুসফুসেও হয় শুনেছি
-- হ্যাঁ তা হয়, তারপর ডাক্তার বললেন, লোয়ার নিউমোনিয়া সাধারণত কোমরের নীচ থেকেই হয়।
-- সত্যিই কি আশ্চর্য না? আমার একবার সেম কেস... কি পেটে ব্যথা, এখানে ডাক্তার বলতে আর বাকি ছিল না কেউ, এমন কোনো পরীক্ষা নেই যা করিনি। শেষে বাবু’র মাধ্যমিকটা শেষ হতেই বললাম, চলো চেন্নাই অ্যাপোলো। কি বলব দাদা, একটা এক্স-রে করেই বলে দিল সব মল মলাশয় থেকে উঠে এসে লিভারে ঢুকে পড়ছে।
-- মানে লিভার সিরোসিস?
-- ঠিক তাই, উনি বললেন ইসবগুল খান চারবেলা আর জল খান, দেখবেন ইউরিন দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
-- বেরোলো?
-- বেরোলো মানে? ইউরিনের রং পুরো হলুদ, কেমন ইয়ে ইয়ে গন্ধ (কয়েকজন নাকে শাড়ির আঁচল দিলেন)।
-- সত্যি পেট পরিষ্কার না হলে, কিচ্ছু হয় না, ক্যান্সার থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস সব ওই একই কারণে হয়... গ্যাস...
-- কেন কৃমি?
-- বাপ রে! আমার নাতি কম ভুগত?! রসোগোল্লার সাথে নিমপাতা বেটে খাওয়ালাম, ব্যস শেষ। কৃমি মানেই মিষ্টির পোকা।
-- জিভটা কেমন টকটক হয়ে থাকে না কৃমি বাড়লে?
-- হবে না? ওদের লালাগুলো মিশছে না শরীরে?
-- ওই থেকেই তো গ্যাসের প্রকোপ বাড়ে।
-- দিদি চলুন ওঠা যাক, রাত হল।
-- চলুন, এরপর বেলা করে খেলে গ্যাসে এমন মাথা চক্কর দেবে যে দাঁড়াতেই পারব না, কোণার্ক ঘোরার দফারফা...
-- (কানে ফিসফিস করে) কোণার্কে ওইসব দেখে দাদা যদি আবার... হিহি... হিহিহিহি... হিহিহিহিহি...
-- তা আর বলবেন না... আমাদের হানিমুন করতে এসে এইখানেই তো... একটা কি জটিল পোজ... বলে কোণার্কে দেখলাম... গেল আমার ঘাড়ে সটকা লেগে... ওনার আবার স্পণ্ডাইলোসিস... উনি খাট থেকে নীচে...
-- তারপর?
-- বাকি হানিমুন সেঁক করে আর ডাক্তার দেখিয়ে...
-- ডাক্তার কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না... হিহি... হিহিহিহি... হিহিহিহিহি...
-- করেনি আবার... বললাম গ্যাস... মাথা ঘুরে গেছিল...
-- উনি কি বললেন?
-- হাসলেন... বেরোবার সময় বললেন, মিশনারীই সেফ... গ্যাসের সমস্যা থাকলে...
হিহি... হিহিহিহিহি... হিহিহিহিহিহিহিহিহিহি...
(ছবি - Suman Das)