প্রেম 'লো ব্যাটারি' দেখাচ্ছে। হৃদয়ের সাথে লুজ কানেকশান। বিপদ সঙ্কেত মাঝে মাঝেই জ্বলে উঠছে। কবিতা, গান, গল্প – (মানে সবই রোম্যান্টিক আর কি) ট্রাই করা হয়ে গেছে। কিছুতেই কিছু কাজ দিচ্ছে না। পাড়ার জগাদা, অফিসের নেপুদা, কলেজের প্রাক্তন/প্রাক্তনী, অভিমানী বা অভিমানিনী – এসবের ডেটাবেসও ফেল করছে। বরং কথা বলতে গিয়ে কর্ডলাইনে কথা চলে গিয়ে ফের আরেক মুখোমুখি সংঘর্ষ হতে হতে রক্ষা পাওয়া গেছে। ‘তোমার তো স্বভাব বদলাবে না... কি করে বদলাবে... উফ্ কি বাঁচা যে আমি বেঁচেছি!... কেন একে ছেড়েই দাও না... আমায় ছাড়তে তো বেশিক্ষণ ভাবতে হয়নি!... একটা এস এম এস ... ”আমি আর পারছি না”... ব্যস!... এই কেসটায় হচ্ছে না কেন?... আসলে আমিই বোকা ছিলাম... গ্র্যান্টেড হয়ে গিয়েছিলাম না..’
অগত্যা এ পথ বন্ধ। খোঁজ খোঁজ। আরে কই যাই... পল্লীগীতি... বাউল... ফকির... ওল্ড মেলোডি... মডার্ন মেলোডি... বাংলা... হিন্দি... ওড়িয়া... ভোজপুরী... অসমীয়া... তামিল... তেলেগু... ইংরাজী.... মায় জাপান কোরিয়া অবধি শোনা হয়ে গেছে... আরে কথা বুঝি কে বলছে... সুর তো বুঝি। সারা বিশ্বেই প্রেমের সুর এক... এও বোঝো না! যত্তসব! রবি ঠাকুর? হুঃ! কি যে একখান কথা কইলেন? সে তো আর শুনতে হয় না, সে তো বেজেই চলেছে মাথার মধ্যে। সব অ্যাপ্স রেডি দাদা, শুধু বুকে ইনস্টল করা যাচ্ছে না। বুকটা হাহাকার করছে। পরিত্যক্ত ড্যামের মত। সিমেন্ট না হওয়া পিলারের রডের মত লাগছে নিজেকে। শূন্যে তাকিয়ে আছি।
ট্রেনে বাসে হাসিমুখ দেখলেই গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, শালারা যেন আমায় দেখিয়ে দেখিয়েই এই অভিনয়টা করছে। আজকাল শাপশাপান্তে তো কোনো কাজ হয় না। তাই গুয়েচ্ছা পাঠাই মনে মনে। যাক শালার সব নষ্ট হয়ে।
এক বন্ধু বলল, মানে বিজ্ঞ বন্ধু আর কি, স্পেস দিতে। বলল প্রেমে নাকি শুদ্ধতা কমে যাচ্ছে আমাদের। তাই নাকি এই সব শুষ্কতার কেস। বলেই হাইফাই সব কোটেশান ঝাড়ল। মালটা নিজে প্রেম করেনি বাপের জম্মে, আমায় এসেছে প্রেমের জ্ঞান দিতে। তা বললাম, 'শুদ্ধতার কেসটা কি?' বলল, 'শরীর বোধ কমা।' বললাম, 'হ্যাজাস না, শরীরবোধ মানে কি? সেক্স?' বলল, 'হ্যাঁ।' বোঝো, শালার প্রেম সম্বন্ধে কনসেপ্ট দ্যাখো, ওই জন্য শালার, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন’ এর বেশি প্রেম এগোলো না। শরীর ছাড়া প্রেম আসে? এতো শালা হোমস্ক্রিন ছাড়া মোবাইল অন্ করার কেস হয়ে গেল।
এদিকে দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে, ইয়েও হয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝেই। কিন্তু বুকের ভিতরটা সেই ফাঁকা ডাবের মত উপুড় হয়ে পাঁজরের সাথে লটকে। প্রেম কই? হে ঈশ্বর প্রেম কই? গেরুয়া প্রেম না, মাদার টেরেসা মার্কা প্রেম না, বুক ধড়াস ধড়াস, লোম খাড়া করা, কানে ভোঁ ধরানো প্রেম কই? যদি প্রেম দিলে না প্রাণে, তবে শরীর কেন জ্বালিয়ে দিলে এমন অগ্নিবাণে...
নাহ্ তাও তো নয়। শুধু শরীরকে দুষে কি হবে? সে তো বায়োলজিকাল ফ্যাক্ট। কিন্তু এমন লাগে কেন? একা থাকলে মনে হয়, পাশে থাকলেই ভাল ছিল, আবার কাছে আসলেই মনে হয় – "হেথা নয় হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনোখানে!" আসলে বুকটা নিয়েই যত ক্যাঁচাল।
মাথায় - অফিস, বাজেট, ব্যাঙ্ক, লোন, জামা-জুতো-বেল্ট, ইত্যাদি সব আছে। কাকে কখন কোথায় প্যাঁচে ফেলতে হবে, ঘোল খাওয়াতে হবে, কোথায় কি ঢপের চপ ভাজা আছে, তেল ছাড়ছে – এসব ডেটা নির্ভুল আছে। ঠিকঠাক আপডেটও নিচ্ছে। আর শরীরের কেসটাও তো ঠিক আছে। মাঝে এই বুকের ভিতরেই যত গারবেজ ফাইলের স্তুপ। তবে কি সময়?
হ্যাঁ এই কথাটাই আমি শুনতে পছন্দ করি না। সময় দিচ্ছি না নাকি নিজেকে? মানে গারবেজ ফাইল সাফ করার? সেও বা বললে কি করে হবে? এই তো, কদিন আগেই মন্দারমণি, তার আগে ডুয়ার্স, তারও আগে লাচুং ঘুরে এলাম। কি কত্তে গেসলাম? গারবেজ ক্লিয়ার করতেই তো! তা করিনি?
তা ঠিক, করিনিই বটে। আসলে যতবার ঢুকতে গেছি, এত ধূলো, এত অন্ধকার, এখানে ওখানে এত ভাঙা শিশি বোতলের কাঁচের টুকরো! তাই গরল পান করেছি। লাভের মধ্যে লাভ হয়েছে এই যে, বন্ধুবান্ধবরা সব আমার কেচ্ছা, ক্ষোভ, রাগ, অভিমানের ফিরিস্তি শুনেছে। কেঁদেছে, সান্ত্বনা দিয়েছে, আমিও তাই করেছি, অবশেষে যা হওয়ার তাই। নিজের ফিউজ নিজেই কেটে, ঘর অন্ধকার করে, বুকের ভিতরকে ‘নেই’ করে আবার লঙ্কায় ফিরে এসেছি। রাবণের মত দশ মাথায়, লক্ষ দিক সামলাচ্ছি, 'না-হৃদি' শরীরের ভাড়া দিচ্ছি নিজেকে বাজারে মত করে চলনসই করে নিয়ে। বুক তোলপাড় হলে তরলাশ্রয়। হরমোনের বান আনছি শরীরে শরীর জুড়ে। চাপা হৃদয়ের গোঙানি বেরোচ্ছে ঘামের সাথে। অর্গাজমের পূণ্য সঞ্চয় চলছে। সবই চলছে, হচ্ছে, গড়াচ্ছে, দৌড়াচ্ছে, উড়ছে, সাঁতার দিচ্ছে। কিন্তু কে যে এক অলক্ষে অদৃশ্য ইসিজি যন্ত্র ফিট করে গেছে, কে যেন বলেই চলেছে – রিপোর্ট ভা্লো নয়... ভালো নয়... ভালো নয়...
সৌরভ ভট্টাচার্য
7 July 2016