সৌরভ ভট্টাচার্য
3 April 2020
আমি যারপরনাই চিন্তিত। উঁহু, চিন্তিত নই দুশ্চিন্তিত। আরো ভালো বাংলায় বললে, বিভ্রান্তিত। কথাটা হচ্ছে লোকে তো ফাণ্ডামেন্টাল প্রশ্নগুলো ভাববে না, সব কিছু ওই এক রাজনীতির রঙে দেখবে, অভ্যাস, বুঝলেন না অভ্যাস! আরে এট্টু মাথাটা খাটা। ফাণ্ডামেন্টাল ক্রশ্নগুলো ভাব! আমার এক বন্ধু প্রশ্ন আর কোশ্চেনকে একসাথে ক্রশ্ন উচ্চারণ করত। ওর মত প্রাচ্য পাশ্চাত্যের মিলনকামী সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ আমি কমই দেখেছি, সে কমোডেও ভারতীয় ভঙ্গীতে বসত। তাতেও লোকের নিন্দা, "মিলাবে-মিলিবে" এসব তো আবৃত্তি করবে, জীবনে প্রতিফলিত করবে কি? মোটেও না। সে যাক, কোথাকার কথা কোথায় আনলাম।
যে কথা হচ্ছিল, ফাণ্ডামেন্টাল প্রশ্নাবলী। আমি ব্যপারটাকে কোনো রাজনীতিতেই দেখতে চাইছি না। মাথায় যে কটা প্রশ্ন তাদের বলি।
প্রথম কথা সময় নিয়ে। ৯ মিনিটই কেন? কেন দশ বা পাঁচ নয়? এমন একটা সময় নিয়ে শাস্ত্র কি বলে আমি না হয় ঘেঁটে দেখব। মনু স্যারের বইটার আধুনিকতম সংস্করণ আমার কাছেই আছে। যদিও বুঝলাম সব বর্ণ ও জাতের জন্যেই সময়টা নির্দিষ্টই। কিন্তু আমি সময়টা রাখব কি করে? কারণ আমি অ্যানালগ ঘড়ি পরি, মানে তিনটে কাঁটাওয়ালা। একটা চড়াং চড়াং ঘোরে, মানে সেকেণ্ডের কাঁটা। একটা থমকে থমকে ঘোরে, মানে মিনিটের কাঁটা। আর একটা যে ঘুরছে তা বোঝাই যায় না, মানে ঘন্টার কাঁটা। এখন দুটো বড় সংখ্যার মাঝখানে যে খুদে খুদে দাগ থাকে সেটা দেখে ৯ মিনিট বুঝতে পারা তো ভীষণ শক্ত ব্যপার! মানে ব্যপারটা বুঝুন, ওই অন্ধকারে কি করে অত সুক্ষ্ম কাঁটার চলন বুঝব? তাইতে আমার চোখে আবার প্লাস পাওয়ার, মানে কাছের জিনিস দেখতে বিনা চশমায় অসুবিধা। আর ও দাগ এত ছোটো চশমাতেও জুত করতে পারব বলে তো মনে হয় না।
এর সমাধান না হয় হতে পারে মোবাইলের টাইমার সেট করে নেওয়া। অর্থাৎ আমি ধরেই নিচ্ছি আমি মোবাইল নিয়েও দাঁড়াব। কিন্তু যদি তার মাঝখানে কোনো কল চলে আসে, কিম্বা যন্ত্রটা হ্যাং করে যায়? তবে তো ৯মিনিটের হিসাব রাখা ভীষণ একটা কঠিন ব্যপার মনে হবে! বেশি ভাবছি? তা ভাবব না? একটা দেশের একাকীত্ববোধের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, বলতে হবে, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে তাকে আচ্ছা ক্যালাও রে...উফ, সরি, ম্লেচ্ছ ভাষা বলেছি। আর হবে না। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে তাকে ঠেসে বোঝাও রে।
মোবাইল না হলে, প্রদীপ নেওয়া যায়। কিন্তু আমাদের বাড়িতে একটাই পিতলের প্রদীপ। সেটি ঠাকুরঘর থেকে আনতে গেলে গৃহযুদ্ধের প্রবল আশঙ্কা। আর যদিও বা আনা গেল অতক্ষণ হাতে ধরে থাকলে গরম লাগবে না? কাপড়ে হাত রেখে জ্বালানো যায়। মাটির প্রদীপ বাজারে আসতে তো মেলা দেরি এখনও।
এর মধ্যে আবার যদি বিষ্টিটিস্টি পড়ে, কালবোশেখি-টোশেখি হয়ে নারকেল গাছটাছ ভেঙেটেঙে পড়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধায়, তবে তো আরো ঝামেলা।
ওদিকে কিছু বাড়িতে ধুয়ো তুলেছে তারা নাকি না খেতে পেয়ে মরবে। কি জ্বালা। বলি মরব বললেই অমন পট করে মরে যাওয়া যায় বুঝি? আর সারা পৃথিবী জুড়ে যে করোনার সংখ্যাতালিকা তৈরি হচ্ছে, ওতে তোমার নাম উঠবে অমন খাব-খাব করে বেয়াড়া চীৎকার করে মরে গেলে? দেশের একটা মান-ইজ্জতের প্রশ্ন আছে না? সব হবে। টাকা আসবে। চাল আসবে। ডাল আসবে। নুন লেবু লঙ্কা আসবে। সব হবে। তুমি একটু ধৈর্য ধরো দিকিনি। আজ বাদে কাল যুদ্ধু হবে তোমাদের খালি খাই খাই। টর্চ জ্বালো। বারান্দায় দাঁড়াও। আচ্ছা বারান্দা নেই, তবে উঠানে দাঁড়াও। আচ্ছা উঠানও নেই, আচ্ছা জ্বালালে দেখছি, তবে রাস্তায় দাঁড়াও। লক ডাউনে রাস্তায় যাওয়া যাবে না? উফ জানি না বাপু, যা ইচ্ছা তাই করো, প্রশ্ন কোরো না। এখন করোনা।