সৌরভ ভট্টাচার্য
5 March 2019
কতটা ভাগ্য আর কতটা যোগ্যতা? কার কাছে বেশি ঋণী থাকব? কার কাছে বেশি কৃতজ্ঞ আমি? অনেকবার ভেবেছি, যতবার ভেবেছি, ততবার ভাগ্যই জিতেছে। তবে কি আমি অদৃষ্টবাদিতার কথা বলছি? না না। আমি বলছি আমার অনুভবের কথা, আমার সোজা তাকিয়ে দেখা অতীতের ছবিটার কথা।
রাস্তায় চলতে ফিরতে যখন আমার চাইতে তথাকথিত অল্প শিক্ষিত, অশিক্ষিত কিম্বা অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের মুখোমুখি হই, তখন মনে হয় শুধুই কি আমাদের মধ্যে যোগ্যতার পার্থক্য? যে সুযোগ সুবিধাগুলোর মধ্যে আমি বড় হয়েছি, সেগুলো যদি সামনের তথা কথিত পিছিয়ে পড়া মানুষটা পেত, সে কি আমার চাইতে অনেক অনেক ভালো কিছু করত না? কতজন মানুষ সব সুযোগ সুবিধা পায়? কতজন জীবনের উজ্জ্বল দিকটায় পিঠ পেতে শুয়ে থাকতে থাকতে আয়ুক্ষয় করে? শুধুই কি যোগ্যতার মানদণ্ড পার্থক্যের মূলে?
যে মানুষ সাঁতার কাটতে পারে, সে যদি তার জীবন চক্রে একটা সমুদ্রও না পায়? কিম্বা নদী? যে দুর্দান্ত পাহাড়ে চড়তে পারে, সে যদি সারা জীবনে একটা টিলার মুখোমুখিও না হয়?
যোগ্যতার কোনো মূল্য নেই বলছি না। কিন্তু সে পরের কথা। আগে ভাগ্য তাকে তার ক্ষেত্রে নিয়ে আসুক।
অবশ্য ভাগ্যের একটা বিকল্প হয়। মানুষের সহযোগিতা। সহৃদয়তা। যে মানুষটা মরুভূমির বালিতে হাত পা ছুঁড়ে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে সাঁতারের চেষ্টা করছে, সেই মানুষকে একজন সমুদ্র দেখা মানুষ যদি হাত বাড়িয়ে দেয়? ভাগ্য হেরে যায়। ভাগ্য আর যোগ্যতার মধ্যে যখন কিছুতেই মেলবন্ধন হয় না, সেই ফাঁকটা পূরণ করতে পারে কিছু সহৃদয় মানুষ। যেমন শিক্ষক, যেমন প্রতিবেশী, যেমন আত্মীয়। হয় না?
আমার ক্ষমতা স্বল্পের চেয়ে স্বল্প। কিন্তু স্বপ্ন পাগলের মত বড়। যারা সিমেন্ট, ইট নিয়ে দৌড়াচ্ছি তাদের বলি পাঁচিল না, সেতু বানিয়ে যাও। যারা অনেক উঁচুতে উড়ছে, বলি শকুনের মত শুধু ভাগাড় না খুঁজে দূরের সমুদ্রের, জঙ্গলের খবরও দাও। আজ এই ইন্টারনেটের যুগে যোগাযোগের সুযোগ কি সাংঘাতিক। শুধু কুয়াশা বানিয়ে, কোলাহল না তুলে, স্বচ্ছ, সহজ রাস্তা বানানো যাক। ভাগ্যের মুখ না ফিরলেও, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া যাক।