আমরা যখন মাস গুনছি, ওনারা গুনছেন বছর। অভিযুক্ত ধরাও পড়ল। ছাড়াও পেয়ে গেল। সেদিনেও সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল। আজকের মতই।
আমরা কী চাইছি, জাস্টিস। কেমন জাস্টিস? "চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা", "ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা" নিশ্চয়ই নয়। আবার দেশের আমলারা বন্যা আটকাতে পারেননি বলে তিরিশজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দেওয়ার মত কিমের রাজত্বও নয়। তবে? না, আমি বক্স অফিস হিট হিন্দি সিনেমা বা দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার মত জাস্টিসের কথাও নিশ্চয়ই ভাবছি না।
তবে কী চাইছি? জন রলের ভাষায় যা জাস্টিসের পরিভাষা, ফেয়ারনেস।
সেদিন হাথরাসে যা হয়েছিল তা ভাবলে আজও বুক কেঁপে ওঠে। এমনকি সংবাদমাধ্যম অবধি প্রবেশ নিষেধ করে দেওয়া হয়েছিল। আজ একি ছবি!
কোনো কোনো জায়গায় লেখা হচ্ছে দেখলাম, আর জি করের কেসটা সমাজের প্রিভিলেজড ক্লাসের সঙ্গে হয়েছে বলে, "হাই প্রোফাইল কেস"। কিন্তু দলিত বলে অনেক ঘৃণ্য অন্যায় চাপা পড়ে যায় আমাদের সমাজে। বাস্তব সেটা। আর জি করের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই এক নাবালিকাকে ধর্ষণ খুন করে বাড়ির পাশেই পুকুরে ভাসিয়ে দেওয়া হল। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম সে খবরের গুঞ্জন সারা দেশে তেমনভাবে কই আলোড়ন তুলল না তো! একজন চিকিৎসক এগারো বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করল হাসপাতালে, দুদিন আগের খবর। সে নিয়েও তেমন কিছু শুনলাম না।
আমরা ফেয়ারনেস চাইছি। আমরা চাইছি প্রতি মুহূর্তে স্বচ্ছতা। অথচ এ দেশেই প্রতি মুহূর্তে সব শ্রেণীর মানুষ ফাঁক পেলেই সু্যোগের সুবিধা নিচ্ছি। আমাদের সমাজে নিত্য অ্যাক্সেপ্টেড "আইন অমান্য"র নানা ক্যাটাগরি আছে। আমরা সেগুলোকে রেগুলার ঘটনা ভেবে চোখে আনি না, গুরুত্ব দিই না। ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় তত্ত্বে সেগুলো ধরেই নিই থাকবে। ইতিহাসের আইন অমান্য হয়েছিল বৃহৎ স্বার্থে। এখানে আমার ব্যক্তিগত স্বার্থে। কিন্তু এগুলো আমাদের মেনে নিয়েই চলতে হচ্ছে। কিন্তু এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষ কখন যে কোথায় বিষবৃক্ষ তৈরি করছে তার হিসাব আমরা রাখি না। যেদিন সে বৃক্ষ ধরা পড়ে, সেদিন আমরা একবারও তাকিয়ে গোটা সমাজের দিকে দেখি না। দেখি না যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক অনেক বিষের চারা আমরাই নিত্য নিজেদের স্বার্থে লালন করে চলেছি। হঠাৎ আমরা সবাই ভীষণ সৎ বলে উঠলে কী করে হবে? সমাজের আনাচে-কানাচেতে নোংরা।
সমাজ একটা ধারাতে চলতেই থাকে। ভালো-মন্দ হঠাৎ কিছু ঘটলে সে নতুনত্বের চমকে একটা দোলা লাগেই। কিন্তু চমক আর জাগরণ তো এক কথা না। কোনটা কী সে হিসাব দেয় সময়। হাথরাস কী ইঙ্গিত করছে জানি না। তবে এটা জানি কালো কাপড়ে কালো দাগ যত নিশ্চিন্তে বাড়ে, সাদা কাপড়ে কালো দাগ বিন্দুতেই ধরা পড়ে। সততা, স্বচ্ছতা - মহাত্মা এক অর্থে দেখেছিলেন। আম্বেদকর জাতিভেদ সমাজ থেকে মূল ধরে উপড়াতে চেয়েছিলেন। কোনোটাই হয়নি। আমাদের দেশ দুর্নীতিতে এখনও দুশ্চিন্তার তালিকাতেই আছে। সে কিন্তু আমার আপনার জন্যেই আছে। এটাই শুধু মনে রাখার।