চশমা ছাড়া ফেসবুকে একটা পোস্টে চোখ পড়ল, একটা শব্দ - sex. প্রোফাইলের ছবিটা খালি চোখে অস্পষ্ট বুঝছিলাম, প্রথমে মনে হল একজন মহিলা, সাথে সাথেই মনের মধ্যে উঠল, বাপ রে! সাহস আছে। তারপর দেখলাম পুরুষ, সাথে সাথেই সে লেখা হয়ে গেল fact আমার কাছে।
তবে fact বলতে যা বুঝি, তাই শেষ কথা না, fact এরও লিঙ্গবৈষম্য আছে বুঝলাম। যা আমার পুরুষ হিসাবে বলতে ভাবতে শালীনতা বোধ ছাড়াই না, একজন মহিলার ক্ষেত্রে তা fact হতে পারে ভাবা যায় না। যদি fact হয় তবে তা অশ্লীল। সত্য বলার সাহসিকতার চেয়ে, নোংরামি করার দায় তাকে বেশি নিতে হয়। কারণ এটাই বুঝে আসছি আমরা। এটাই বোঝানো হয়েছে।
ছোটোবেলা থেকে প্রচুর দেবীমূর্তির সাথে বড় হয়েছি। লক্ষী, সরস্বতী, দূর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী, শীতলা, সালকিয়ায় বড়মা, মেজোমা, ছোটোমা - বিশ্বাস, এই সব দেবীদের হাতে সংসারের ভার। এরা দেবী। মা, বড়মা, ঠাকুমা, দিদা, মাসিরা - সবাই ঘিরে একটা নিরাপদ স্থান। দেবীর মত। দিদিরা, বোনেরা আমার জন্য নিজেদের প্রায়োরিটি ছাড়বে এটাই কাম্য। কারণ আমি পুরুষ, তারা নারী, দেবী। তারা ছাড়বে। আমরা নেব, এমনটাই সমাজের ব্যবস্থা। "সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে", এর বিপরীত কথাটাও কিন্তু একই সাথে তৈরি হয়, "সংসার বিষের হয় রমণীর দোষে"। পুরুষ নিষ্ক্রিয়। অটল অচল সুমেরুবৎ। তার জন্যে সব কিছুই পূর্ব হইতে প্রদত্ত। এমনকি রমণীও। যাকে শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার পর দেবী-মা হওয়ার সাধনায় ব্রতী হতে হয়। বীর্যের আবেগের উপর তাকে স্থান পরিবর্তন করে নিতে হয়। সেটা যত সুচারুরূপে করা যায় তত - "মহাভারতের কথা অমৃতসমান"
কি উচিৎ, কি অনুচিত সে মনুর সাথে এলিজাবেথ টেলার লড়ে বুঝে নিক, আমি ওর মধ্যে ঢুকছি না। কিন্তু আমি কি দেবীর রঙ চটতে দেখছি? আমি কি মন্দিরের গায়ের পলেস্তারা খসতে দেখছি? নারীকে হয় মাতৃরূপে দেখতে হয়, নয় কামের দ্বারা তুষ্ট করে হয় - আমি বলিনি, শাস্ত্রে বলেছে, সমাজ বলেছে। রাতের অন্ধকারে তুমি নিজেকে তার সামনে দাঁড় করিয়ে দেখো কি চাইছ - মা না নারী? তুমি যা চাইবে সে তাই হবে। হতে বাধ্য সে। সে রমণী তুমি রমণ। সে শক্তি, তুমি শক্তিমান। তুমি আসল, সে আসলের মত। তুমি পুরুষ, তুমি জন্মসূত্রেই ধী, বুদ্ধি, প্রতিভার স্বাভাবিক ধারক। পুরুষ জন্মলগ্ন থেকেই বুদ্ধির জনক, স্ত্রী তুমি নও, তোমায় প্রমাণ করতে হবে। তুমি বহু মহাপুরুষের পতনের কারণ। তুমি নরকের দ্বারস্বরূপ। তবু আমি, এ তর্কেও যাব না, ব্যাসের সাথে নাইটেঙ্গল বুঝে নিক।
তবে কি পরিবর্তন চাইছি? বালাইষাট! এমন আর্যসভ্যতার পরিবর্তন চাইব? কটা মাথা আমার ঘাড়ে? আমি fact খুঁজছি। তবে কি fact এর চেয়ে শক্তিশালী শ্লীলতা?
হো...হো...হো....
কথাটা শ্লীলতা না। কথাটা ভয়, নিরাপত্তাহীনতা। শ্লীল অশ্লীল তো গৌরবের বিষয়। রুচির বিষয়। ভয় কি রুচির বিষয় না গৌরবের? হ্যাঁ ভয়। যে ভোগ্য সে দেবী বা নারী হলে কাজ চলে যায়, মানুষের মর্যাদায় দেখতে হলে অস্বস্তি হয়। কারণ সে দায়ভার নিয়ে আর যা হোক সমাজ চলে না। নারী পথে বিবর্জিতা, স্ত্রীবুদ্ধি প্রলয়ঙ্করী - আমি বলিনি শাস্ত্রে বলেছে। কেন বলেছে? প্রমাণ নিশ্চই অজস্র আছে। সেদিনও আছে আজও আছে। কিন্তু পুরুষবুদ্ধিতে প্রলয় দেখাও তো? নেই। পাবে না। যতই বিশ্বযুদ্ধের উদাহরণ দাও, সে শক্তির ক্ষেত্র। মায়ের ইচ্ছা। মা কালী কিসের মূর্তি রে? ধ্বংসের।
সত্যি বলতে প্রতিযোগিতা মেধার ক্ষেত্রে তাও মেনে নিতে হচ্ছে। কিন্তু প্রতিযোগিতা বন্ধঘরে অসহ্য। আর প্রতিযোগিতাই বা হবে কেন? সহাবস্থান হবে না কেন? কি করে হবে? স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয় এ সবাই জানে, সবাই না বুঝলেও। কিন্তু মত প্রকাশের জায়গায় fact আসুক। শ্লীল অশ্লীল পরে কিছু একটা দাঁড়িয়েই যাবে। যে শ্লীলতা শিখিয়ে আনতে হয় সে বেশিদিন স্থায়ী হয় কই? দাঁড়ায় তো সেই fact. তবে fact এর কি লিঙ্গবৈষম্য থাকা উচিৎ? আমি অন্য কাউকে না, নিজেকেই প্রশ্ন করছি। শুধু এই কথাটা সরিয়ে নিই না কেন - তোমাদের এটা বলতে নেই। শোনা অভ্যেস করি। অত ভয় পাওয়ার কি আছে? তাতে দুনিয়া যদি উল্টেই যায় তো উল্টাক। উল্টোপিঠটাও দেখা যাবে না হয় তাহলে।