Skip to main content

দুজন সেলসম্যান এলেন। বয়েস দুজনেরই পঞ্চাশ পেরিয়ে গড়িয়েছে। বললেন, টিটাগড়ের মিল বন্ধ। তাই। হাসি মুখে বললেন, যদি আমি কিছু না কিনি তবে তাদের আত্মহত্যা করতে হবে। কি সাংঘাতিক হাসি!

জিজ্ঞাসা করলাম, কি আছে?

ফিনাইল, হ্যাণ্ডওয়াশ, রুম ফ্রেশনার বের করলেন ব্যাগ থেকে। এক একটার দাম চাইছেন বাজারের দামের থেকে দ্বিগুণ। আক্ষরিক অর্থেই দ্বিগুণ।

এখন দ্বন্দ্ব, নিজেকে প্রতারিত হতে দেব, না তাঁদের উস্কে দেওয়া সেন্টিমেন্টকে প্রশ্রয় দেব। প্রশ্রয় দিলে দুভাবেই ঠকা হবে। দামেও, নিজের সেন্টিমেন্টেও। যে মানুষ দরজায় দাঁড়িয়ে বলে, তুমি এই ফিনাইলটা দ্বিগুণ দামে কেনো, নইলে আমি আজই বাড়ি গিয়ে আত্মহত্যা করব, দায় থাকবে তোমার; এও তো আমাকে গানপয়েন্টে রাখছে। আমার সেন্টিমেন্টকে প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়ে কাজ উশুল করে নিতে চাইছে। একি অত্যাচার নয়! এক্সপ্লয়েটেশান নয়?

বললাম, নেব না।

দুজনেই রেগে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে দুজনেরই মুখের ভাব বদলে গেল। যেন হাতে সত্যিকারের বন্দুক থাকলে তক্ষুনি দেন ঠুকে।

ঘরে ঢুকে দরজা দিলাম। সেন্টিমেন্ট সত্যিই বড় বালাই। অবুঝ। বিচারবিবেচনার ধার ধারে না সে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা বুঝতেন। সেই প্রাচীনকালে লিখছেন,

"শ্রদ্ধার সঙ্গে দাও। অশ্রদ্ধার সঙ্গে দিও না। সামর্থ্য অনুসারে দিও। বিনয়ের সঙ্গে দিও।"

আজকাল চারদিকে এই সেন্টিমেন্টের এক্সপ্লয়টেশান। টিভির বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে, বাড়ির সামনে আসা এমন গানপয়েন্টে রাখা সেলসম্যান অবধি।

আবার অন্যকরমও আছেন। যেখানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে মনে হয় না কোনোভাবে নিজেকে ঠকালাম। এক বৈষ্ণব আসেন, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ঠুন ঠুন করে খঞ্জনি বাজান, যা দিই হাতে নিয়ে কপালে ঠেকিয়ে বলেন, ভালো আছেন বাবা? সাবধানে থাকবেন। ওনার অমলিন হাসি দেখে মনটা শান্ত হয়ে যায়। কোনো জবরদস্তি নেই, কাড়াকাড়ি নেই, সেন্টিমেন্টকে উস্কানি দেওয়ার প্রবৃত্তি নেই। সবটাই শ্রদ্ধার সঙ্গে ঘটে যায়। আসলে কেউ সাহায্য চাইলে তো মান হারায় না, কেউ ঠকাতে চাইলেই মান হারায়। কেউ কাউকে এক্সপ্লয়েট করতে চাইলেই মান হারায়। সে যে-ই হোক না কেন। এক্সপ্লয়েটেশান আর শ্রদ্ধাবোধ তো একসঙ্গে কিছুতেই থাকতে পারে না, না?