Skip to main content
 
বাঙালি আবেগপ্রবণ জাত। প্যানিকপ্রবণ জাত। ইউফোরিয়াপ্রবণ জাত।
       তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ হল আমাদের মিডিয়া। সে ছাপাই হোক, কি ইলেকট্রনিক। তবে ইলেকট্রনিকে প্রকাশটা আরো জোরালো। আমাদের গরমকালে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া নিয়ে প্যানিক, বর্ষাকালের শুরুতে বর্ষা কেন আসছে না নিয়ে প্যানিক, তারপর বন্যা হবে না তোনিয়ে প্যানিক? ‘এত কমে চাষ হবে তো’ – নিয়ে প্যানিক। শীত আসছে না কেন নিয়ে প্যানিক। শীত যাচ্ছে না কেন নিয়ে প্যানিক। ডেঙ্গু নিয়ে প্যানিক। ভিড় নিয়ে প্যানিক। রোগ নিয়ে মারাত্মক অবসেসনাল প্যানিক।
       এখন আর নেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে এবিপি আনন্দ খুললেই মনে হয় যেন যাত্রাপালায় বসে আছি, “কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছেবলে এমন একটা হুঙ্কার দিলেন পাঠক বা পাঠিকা যেন সদ্য শিশির ভাদুড়ির কাছ থেকে পাঠ মুখস্থ করে এসেছেন গ্রীণরুম থেকে। এই দৃষ্টান্তে অর্ণব গোস্বামীর খ্যাতি তো দেশে বিদেশে ছড়িয়েই পড়েছে। ভাগ্যে প্রণয় রায় ছিলেন, কি করে খবর পড়তে হয় শিখিয়ে গেছেন। বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা প্রত্যেকেই লাগাতার কোরোনার কভারিং করে চলেছে, অত্যন্ত গাম্ভীর্যতার সাথে, এমন নাটুকেপনায় নয়। পাশাপাশি আমাদের বাংলা নিউজ চ্যানেলগুলোতে অমন একটা সাংঘাতিক উচ্চনাদে ডায়ালগ ডেলিভারির পরেই বলে যাচ্ছেন কিন্তু আপনারা আতঙ্কিত হবেন না।
       তার উপরে এসেছে আজকের সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুক আর হোয়াটস অ্যাপ। আমি আজ অবধি এমন বাঙালি দেখিইনি বলতে গেলে যিনি এমবিবিএস পাশ নন, সাথে কোনো একটা রাজনৈতিক দলের নির্বাচির সদস্য নন। এখন দেখছি এমন কোনো বাঙালিই পাওয়া ভার যিনি হু এর সদস্য নন, বা আমাদের কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের পরিচালকমণ্ডলীর কেউ নন।
       যদি কোরোনার সাথে মানুষকে লড়তেই হয় তবে বাঙালির হাত থেকে এখনই এই সোশ্যাল মিডিয়া কেড়ে নেওয়া উচিৎ, অথবা নিজে সরে আসা উচিৎ। এই মারাত্মক প্যানিকের ঠেলায় আসল নির্দেশিকাগুলো চাপা পড়ে গিয়ে শুধু মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্যগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একজন মানুষ রাস্তা দিয়ে গেলে লোকে ভাবছে সব আইন ভাঙা হয়ে যাচ্ছে, কেউ একজন বিনা মাস্কে ঘুরে বেড়ালে ভাবা হচ্ছে কোরোনা তার ঘাড়ে উঠে নেত্য করতে শুরু করে দিচ্ছে। নিজেদের বুদ্ধি-কল্পনা-অতিকল্পনা থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ কথা লিখুন না। তা না, হয় কেউ নিজের কাজের ধারভাষ্য দিয়ে চলেছেন, তিনি কি কি করেছেন, কি কি করবেন ভাবছেন, কি কি করা উচিত... ওরে বাপ আমার এ সবের জন্যে লোকজন মেলা পড়াশোনা করে চিকিৎসক ইত্যাদি হয়েছেন বাপ আমার। ওদের কথাগুলো শুনি। আর একটা কথা তো সত্যি, যে কোনো খারাপ পরিস্থিতি মিডিয়ার জন্য মঙ্গলজনক। তাই তাদের মধ্যেও বেছে নিতে হবে কাকে শুনব, কাকে শুনব না।
       ফেসবুকে, হোয়াটস অ্যাপে অনেক ভালো কাজ হয় মানি। আমি নিজেই কি এই মিডিয়ায় সক্রিয় নই? কিন্তু এখন হিতে বিপরীত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ অতি প্যানিকগ্রস্থ হয়ে পড়ছে, এর বিকারের রূপটা যখন বাইরে আসতে শুরু করবে সে আরেক হুজ্জুতি হবে। তার চাইতে সরে থাকাই ভালো আপাতত এ সব থেকে।
       আমার লেখা পোস্ট করার ইচ্ছা হলে মাঝে মাঝে করব, কিন্তু নিয়মিত উত্তর, প্রতিক্রিয়া বা অন্যের লেখা পড়ে উঠতে পারব না, আমায় মার্জনা করবেন। কিন্তু এই মিডিয়ার এই হিস্টিরিয়াগ্রস্থ রূপের থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাই আপাতত। তাই একটু দূরত্ব বাড়িয়ে নিলাম।
       সবাই সুস্থ থাকুন। যা প্যানিক বাড়ায় তা করবেন না, শুনবেন না, দেখবেন না। অথেন্টিক সোর্স থেকে খবর রাখুন। ব্যস, আর কিছু করার নেই আমাদের। আরো একটা অবশ্যই যোগ করব, অনেকেই সঠিক তথ্য দিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে চলেছেন, তাদের জন্য আমার কুর্ণিশ।